বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বর্ষায় কানের অসুখ : কানে ছত্রাকের সংক্রমণ

ears

কয়েক দিন ধরেই শুভর (ছদ্মনাম) মন ভালো নেই। কান দুটো কেমন যেন ভারী হয়ে আছে, চুলকাচ্ছে, ভেজা ভেজা লাগছে। কটন বাড দিলে কালো ময়লা আসছে। খুবই অস্বস্তিকর অনুভূতি। বন্ধুরা টের পেলে কী যে হয়!
অন্যদিকে ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে পুষ্পিতার (ছদ্মনাম) চিন্তার শেষ নেই। কয়েক দিন ধরে মাঝে মাঝে ব্যথা বলছে। কান পরিষ্কার করলে ভেজা কাগজের মতো কী যেন বের হচ্ছে। বাচ্চার কান পরীক্ষা না করালেই নয়, ভাবছেন পুষ্পিতা।
আসলে স্থান-কাল-পাত্র ভিন্ন ভিন্ন হলেও সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার জন্য। যার নাম অটোমাইকোসিস।
ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখানে রোদ, আর্দ্রতা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাব ছত্রাক সংক্রমণের জন্য অনুকূল হিসেবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে ছত্রাক সংক্রমণ সহজতর হয়।
ছত্রাক সংক্রমণ: কারা দায়ী?
বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে।
এদের মধ্যে কোনোটি দেখতে কালো, কোনোটি বাদামি, সাদা আবার কোনোটি ভেজা কাগজের মতো আঠাল।
ছত্রাক সংক্রমণ হলে কেমন করে জানা যাবে আসলেই কি সংক্রমণ হয়েছে অথবা কী ধরনের ছত্রাক সেখানে আছে। ছত্রাক সংক্রমণ হলে রোগীরা যেসব সমস্যার কথা বলে বা যেসব লক্ষণ আমরা পাই সেগুলো হলো:
 কানে অস্বস্তিকর অনুভূতি হওয়া।
 কানে ব্যথা হওয়া।
 কান বন্ধ হয়ে যাওয়া।
 কান চুলকানো।
 কানে সামান্য কম শুনতে পাওয়া।
 কান ভেজা ভেজা লাগে। কান থেকে মাঝেমধ্যে তরল পদার্থের নিঃসরণ হওয়া। তবে এর পরিমাণ সাধারণত বেশি হয় না।
এসব লক্ষণ নিয়ে রোগী যখন নাক কান গলা রোগের চিকিৎসকের কাছে আসে তখন কান পরীক্ষা করলে যা পাওয়া যাবে:
 কান বলতে বাইরে থেকে যেটা দেখি সে অংশটা সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। খুব বেশি সংক্রমণ হলে কানের চামড়া আক্রান্ত হতে পারে।
 কানের ছিদ্র থেকে পর্দা পর্যন্ত প্রায় ইঞ্চি খানেক লম্বা যে পথ সেখানে ছত্রাকের দলা পাওয়া যেতে পারে।
 যদি ছত্রাকের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয় তাহলে সেখানে তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়। এমনকি দুর্গন্ধ হতে পারে। ছত্রাকের দলা কালো, বাদামি, সাদা অথবা ভেজা কাগজের মতো দেখতে হবে।
 কানের পর্দা স্বাভাবিক থাকবে। তবে কখনো কখনো সংক্রমণের তীব্রতার ওপরে নির্ভর করে লাল হতেও পারে।
কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি?
আছে। সময় ও সুযোগ থাকলে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
 অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে কান থেকে ছত্রাকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
 যেসব রোগীর বারবার কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা যেতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কানে ছত্রাকের সংক্রমণের হার বেশি।
রোগনির্ণয় তো হলো, এবার চিকিৎসা দেওয়ার পালা।
চিকিৎসা দেব। কীভাবে দেব? কী করব?
একজন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ভালো করে রোগের বিবরণ শুনে, কান পরীক্ষা করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ধীরে ধীরে কান থেকে ছত্রাকের দলা বের করবেন। কানটা শুকনো করবেন।
তারপর ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ দেবেন। বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ওষুধ পাওয়া যায়। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া যায়। কান সেরে যাবে।
এর পাশাপাশি ডায়াবেটিক থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওষুধ ব্যবহার শেষে পুনরায় কান পরীক্ষা করাতে হবে। এর পাশাপাশি কানে ব্যথা হলে ব্যথানাশক বড়ি খেতে হবে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয়, তাহলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
কানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন বড়ি থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
প্রতি ক্ষেত্রেই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ এবং ফলোআপ করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে রক্ষা পেতে হলে সব সময়ের জন্য আমাদের যা করণীয় তা হলো:
 দেশলাইয়ের কাঠি, কটন বাড, মুরগির পাখা, ঝাড়ুর শলা, কাপড়, কলমের ক্যাপ প্রভৃতি দিয়ে কান খোঁচানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
 রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করে তাদের দিয়ে কান পরিষ্কার না করানো।
 নোংরা ময়লা পানিতে গোসল না করা।
 ডুব দিয়ে গোসল না করা।
 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
মো. নাজমুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, নাক কান গলা রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১১, ২০১২
কবজি ব্যথার সহজ সমাধান
kobji-bytha
স্বল্প পরিচিত রোগ: কারপাল টানেল সিনড্রোম
হাতের কবজিতে ব্যথা নিয়ে রোগীএলেন। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীতে ব্যথাটা বেশি অনুভূত হয়। কখনো কখনো বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশ ঘেঁষে খানিকটা ওপরের দিকেও ব্যথা হয়। পাশাপাশি রাতে হাত অবশ হয়ে আসে। অনেক সময় অস্থির অনুভূতির কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন বৃদ্ধাঙ্গুল কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। এসব দেখেশুনে তিনি বললেন, এ রোগের নাম কারপাল টানেল সিনড্রোম।
কেন এমন হয়?
হাইপোথাইরয়েডিজম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, নিয়মিত মদ্যপান, ওজন বাড়া, গর্ভধারণ করা প্রভৃতি কারণের জন্য এই কারপাল টানেল ছোট হয়ে যায়। আবার কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও হতে পারে। মধ্যবর্তী বয়সের মহিলারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কবজির হাড় ভেঙে সঠিকভাবে জোড়া না লাগলে বা দীর্ঘদিন প্লাস্টার করে রাখার ফলে কারপাল টানেলে চাপ পড়তে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
এ রোগের কারণে বুড়ো আঙুল থেকে মধ্যমা পর্যন্ত তিন আঙুলে শিরশির ও অবশ অনুভূতি, সঙ্গে ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত বুড়ো আঙুল ও মাঝের তিন আঙুল আক্রান্ত হলেও কনিষ্ঠ আঙুল কখনো আক্রান্ত হয় না। রাতের বেলায় রক্ত সঞ্চালন কম হওয়ার কারণে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। বুড়ো আঙুলের গোড়ার মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও আঙুল দুর্বল হয়ে যায়, কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। হাত মৃদু ঝাঁকালে বা ঝুলিয়ে রাখলে একটু আরাম অনুভব হয়। ব্যথা কবজি থেকে ওপরের দিকে উঠতে পারে।
পরীক্ষা: রোগ নির্ণয়ের জন্য নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি বা নেসিভি পরীক্ষাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নার্ভ অনেকটা ইলেকট্রিক তারের মতো, এর ভেতর দিয়ে তথ্যগুলো বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মতো প্রবাহিত হয়।
ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ চলাচলের গতি মাপতে যেমন মিটার ব্যবহার করেন, নার্ভ কনডাকশন টেস্টের মাধ্যমে নার্ভের ভেতরের বিদ্যুৎ চলাচলের গতি ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
এরপর আসে ইএমজি বা ইলেকট্রোমায়োগ্রাম পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মাংসপেশির নার্ভ সাপ্লাই সম্পর্কে বোঝা যায়। কবজি ও নার্ভের গঠন বোঝার জন্য কবজির সিটি স্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ ছাড়া সহায়ক পরীক্ষা হিসেবে আক্রান্ত হাতের এক্স-রে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের পরীক্ষা অপরিহার্য।
চিকিৎসা
মৃদু ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কবজির বিশ্রাম, যার জন্য কবজির ওপরে চাপ পড়ে এমন সব ধরনের কাজকর্ম পরিহার করা উচিত। যেমন:
 কাপড় ধোয়া
 টিউবওয়েল চাপা
 একটানা লেখালেখি না করা
 দা, কোদাল বা কুড়াল দিয়ে কিছু কাটাকাটি করা
 ড্রিল মেশিন ব্যবহার করা
 হাতে ভারী ওজন বহন করা
 রাতে সিপ্রন্ট বেঁধে ঘুমানো বেশ কার্যকরী।
 সঙ্গে ব্যথার ওষুধ এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন—সব মিলিয়ে কিছুটা সুফল দেয়। একটু বেশি ব্যথা হলে অনেকে সরাসরি অবশের ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। এতে সাময়িক উপকার পাওয়া যেতে পারে, আবার ইনজেকশন নার্ভের মধ্যে ঢুকে গেলে হাত আরও অবশ হয়ে যেতে পারে।
 এসব চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলে অপারেশন করা যায়।
মূলত এ চিকিৎসায় অপারেশন কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ফলাফল অত্যন্ত আশানুরূপ। অপারেশনের পরে ব্যথা সঙ্গে সঙ্গেই কমে যায়। অবশ ভাব কয়েক দিন পরে কমে আর মাংসপেশির সবলতা কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরে আসে।
 আধুনিক সময়ে এন্ডোসকোপির মাধ্যমে কম কাটাছেঁড়া করে এ অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কবজির একটু নিচের দিকে ছোট ছিদ্র করেই অপারেশন করা হয়, যেখানে স্থানীয়ভাবে অবশ করে অপারেশন করা হয়, এমনকি রোগীকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয় না।
সুদিপ্ত কুমার মুখার্জী
নিউরোসার্জন, ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট আব নিউরোসায়েন্স, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৯, ২০১২

দাঁত তো মাজি তবু…

brush-teeth

আমরা প্রায় অভিযোগ পাই যে অনেকেই নিয়মিত মুখ পরিষ্কারের চেষ্টা করে। তার পরও দাঁতে গর্ত বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে এমনটা হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেককে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ আর সঠিক নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ব্রাশ এক কথা নয়। দাঁতের গঠন ও অবস্থান অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের নিয়ম শিখতে হবে এবং তা নিয়মিত মেনে চলতে হবে।
সঠিকভাবে ব্রাশ করলেও দুটি দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রাশ পৌঁছে না, সে ক্ষেত্রে সেখানে খাদ্যকণা ও জীবাণু লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কারের জন্য ডেন্টাল ফ্লস নামক বিশেষ সুতা ব্যবহার শিখতে হবে। মাঝেমধ্যে ‘এন্টি প্ল্যাক’ মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা হয়।
দাঁতের অস্বাভাবিক গঠন
জন্মগত কারণে অনেকের দাঁত ভঙ্গুর হয়। আবার কারও কারও দাঁতের বর্ধনের পৃষ্ঠে অস্বাভাবিক সূক্ষ্ম গভীর ফাটল থাকে, যেখানে ব্রাশ পৌঁছে না। এ ধরনের জন্মগত ও গঠনে ত্রুটিপূর্ণ দাঁতের ক্ষেত্রে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শের আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নেওয়া যায়।
দাঁতের অস্বাভাবিক অবস্থান
উঁচু, নিচু, ফাঁকা, এলোমেলো দাঁত পরিষ্কার রাখা তুলনামূলক কষ্টসাধ্য, এই জাতীয় দাঁতে দ্রুত প্ল্যাক জমে ও মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। অর্থোডন্টিক ও কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসার মাধ্যমে অবস্থানগত একটিকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরানো সম্ভব।
নিঃসৃত লালার ধরন
যাদের মুখে লালার ধরন ঘন, আঠালো বা তুলনামূলক কম, তাদের দাঁত ও মাড়িতে রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। শারীরিক ও মানসিক নানা কারণে লালা নিঃসরণে তারতম্য হতে পারে। যে ক্ষেত্রে কারণ চিহ্নিত করে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে দিনে ১১ বা ১২ গ্লাস পানি পান, চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবানোসহ কৃত্রিম লালা ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস
যারা আঁশযুক্ত খাবার, দেশীয় ফলমূল, দুধ, ডিম, শাকসবজি ছোট মাছ প্রভৃতির পরিবর্তে মিষ্টি, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, ফাস্টফুড, কোমলপানীয় বেশি খায় এবং যারা ধূমপান, জর্দা ও গুল ব্যবহার করে, তাদের ডেন্টাল রোগের আশঙ্কা থাকে।
শারীরিক অসুস্থতা
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি, অপুষ্টি ইত্যাদি নানা অসুস্থতায় যেমন ডেন্টাল সমস্যা তৈরি হয়, তেমনি নানা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবও দাঁত ও মাড়ির ওপর পড়ে।
আমাদের মুখে অসংখ্য প্রজাতীয় জীবাণুর অভয়ারণ্য। অনুকূল পরিবেশ পেলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই সুস্থ মুখ ও সুন্দর হাসি ধরে রাখতে নিয়মিত এবং সঠিক নিয়মে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। পাশাপাশি উল্লিখিত কারণগুলোর দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মো. আসাফুজ্জোহা, দন্ত বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২

কানের পর্দা ফেটে গেলে

kaner porda

বিভিন্ন কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন—
 বাতাসের চাপের তারতম্য
 তরল পদার্থের চাপ
 কঠিন বস্তুর আঘাত।
বায়ুচাপের কারণে কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার পেছনে থাকতে পারে—
 কানের ওপরে ঘুষি বা থাপড়ের আঘাত
 বোমা বা পটকার বিস্ফোরণ।
এসব ক্ষেত্রে পর্দার সামনের এবং নিচের দিকের অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তরলজনিত পারফোরেশনের কারণ হতে পারে:
 সিরিঞ্জিং
 ক্যালরিক টেস্ট
কঠিন বস্তুর কারণে পর্দা ছিন্ন হতে পারে, যদি বাইরে থেকে কোনো কিছু কানে ঢুকে যায় অথবা সেই ঢুকে পড়া বস্তুকে যদি অপসারণের প্রয়াস না নেওয়া হয়।
চিকিৎসা: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কানের পর্দা এমনি এমনি জোড়া লেগে যায়। চিকিৎসার তেমন কোনো কিছু প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, যদি:
 টিস্যু নষ্ট হয়ে থাকে
 পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ সৃষ্টি হয়।
অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগানো যায়।
পারফোরেশন ছাড়া কানে আঘাত থেকে সৃষ্টি হতে পারে:
 হাড়ের বিচ্যুতি
 অন্তঃকর্ণের ক্ষতি
 শোঁ শোঁ শব্দ
 ফেসিয়াল নার্ভের ক্ষতি।
চিকিৎসককে নিজে থেকেও ছুরি চালাতে হয় কানের পর্দায়, যখন তিনি মাইরিংগোটমি অপারেশন করেন। মধ্যকর্ণের প্রদাহ এবং পানি জমে গিয়ে শ্রুতি-স্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য ওই চিকিৎসা তো করাই হয়। সেই ছিদ্রকে নির্দিষ্ট সময়কাল সচল রাখার জন্য গ্রমেট নামের ছোট বায়ু-বোতাম বসিয়ে দেন অটোলজিস্টরা। কিন্তু যেনতেন কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে আমরা পরিতাপ না করে পারি না।
পর্দার ক্ষত ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জোড়া লাগে না এবং আর পাঁচজন কানপাকা রোগীর মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়। সামাজিক অস্থিরতার কারণে, অসচেতনতার কারণে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার যে প্রবণতা আমাদের চারপাশে, পরিবারে ও সমাজে, এ কারণে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়।
মিরাজ আহমেদ
নাক-কান-গলা বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২

শব্দ বেশি তাই কানে শুনি না

air pollution

যদি শব্দদূষণের কারণে রোগীর শ্রুতির যথার্থতা হ্রাস পায়, তাকে বলা হয় শব্দজনিত শ্রুতিহ্রাস। এটি একটি অসুস্থতা।
নয়েজ বা শব্দদূষণ: যে শব্দ শারীরিক ও মানসিক আঘাত সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির বিরক্তি উৎপাদন করে, তাকে নয়েজ বা শব্দদূষণ বলা হয়।
শব্দদূষণের ফল: ক. কানের
ক্ষণস্থায়ী শ্রুতি হ্রাস: কনসার্ট বা মাইকের শব্দ শোনার পর ঘটতে পারে।
স্থায়ী শ্রুতি হ্রাস: যদি ক্ষণস্থায়ী শ্রুতি হ্রাসের কারণটি বারবার ঘটতে থাকে অথবা আক্রান্ত হওয়ার একটি মাত্র ঘটনা থেকেও স্থায়ী শ্রুতিভ্রংশ হতে পারে। এতে শ্রবণশক্তি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে না।
অন্যান্য প্রতিক্রিয়া: অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের উত্তেজনা এবং নর-অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের ফলে—মানসিক পীড়ন, অভিনিবেশের সমস্যা, অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি। দ্রুত হূৎকম্পন, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, গর্ভস্থ শিশুর সমস্যা।
শব্দজনিত আঘাত: একক এবং তীব্র শব্দের জন্য তাৎক্ষণিক শ্রুতি হ্রাস ঘটতে পারে, যেমন—বিস্ফোরণ, বন্দুকের গুলি অথবা শক্তিশালী পটকার শব্দ।
রাইফেল বা বন্দুকের গুলির শব্দমাত্রা থাকে ১৪০ থেকে ২৭০ ডেসিবেলের মধ্যে। আকস্মিক উচ্চমাত্রার শব্দ আউটার হেয়ার সেল এবং রিজনারস মেমব্রেনের ক্ষতি করতে পারে। এরা হচ্ছে অন্তঃকর্ণের বিভিন্ন অংশ। পরিপাকীয় এবং গঠনগত দুই ধরনের ক্ষতির শিকার হয় কোষগুলো। ফ্রি রেডিকেলজনিত ক্ষতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরিপাকজনিত রূপান্তর ঘটলে ক্ষণস্থায়ী এবং গঠনগত রূপান্তরের ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রুতিভ্রংশ হয়।
ক্ষতিকর শব্দের মাত্রা: কতটা শব্দ এবং কতক্ষণ ধরে শোনা হচ্ছে তার ওপর ক্ষতি নির্ভর করে। ৮৫ ডিবির চেয়ে বেশি শব্দকে ন্যূনতম ধ্বংসাত্মক শব্দ বলা হয়।
নিরাপদ শব্দসীমা: ৮৫ ডিবি শব্দের ভেতর দৈনিক আট ঘণ্টা করে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন থাকা নিরাপদ। ১০০ ডিবি শব্দ মাত্রায় প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন থাকা নিরাপদ।
শব্দদূষণের উৎস: আধুনিক যন্ত্রপাতি— হাইড্রোলিক হর্ন, জেট ইঞ্জিন, নির্মাণকর্ম ও কনসার্ট।
সামাজিক শব্দদূষণ—ট্রাফিক হর্ন, গার্হস্থ্য খেলনা ও মাইকিং। শিল্প কারখানার শব্দদূষণ। ট্রাফিকজনিত শব্দদূষণ।
উপসর্গ: কম শোনা—পুরুষ ও মধ্যবয়সীদের বেশি হয়। টেলিফোনে কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে।
শোঁ শোঁ শব্দ—ঘুম, মেজাজ ও আলাপচারিতায় সমস্যা হয়। কানে ব্যথা, অতি শব্দ সংবেদনশীলতা, ঘুম ঘুম ভাব, মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত ও মনোযোগের সমস্যা।
এ ছাড়া ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা ও ভীতিগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা:  ব্যাখ্যা  পুনর্বাসন: হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র।
প্রতিরোধ: শব্দদূষণ থেকে দূরে থাকা। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসুখের সুচারু নিয়ন্ত্রণ ও পেশার পরিবর্তন।
ওষুধপত্র: অন্তঃকর্ণের ওপর ক্রিয়াশীল ওষুধ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অটো-টক্সিক ওষুধ বর্জন।
 ইয়ার প্লাগ ব্যবহারে অতিরিক্ত শব্দ কানে ঢুকতে না দেওয়া।
 যারা রিস্ক গ্রুপে আছেন, তাঁদের নিয়মিত হিয়ারিং টেস্ট করানো।
 প্রকৌশলগত ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতির শব্দ উৎপাদন মাত্রা কমিয়ে আনা বা ‘নীরব’ যন্ত্রপাতির অন্বেষণ করা।
 শব্দ হ্রাসে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা: আবাসিক বা নীরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকার জন্য পৃথক পৃথক শব্দমাত্রা বেঁধে দিয়ে সরকার শব্দদূষণ রোধের চেষ্টা করে। যেমন— সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই তিন ধরনের এলাকায় যথাক্রমে ৫০ ডিবি, ৭০ ডিবি ও ৭৫ ডিবি শব্দ অনুমোদন লাভ করে।
রাত নয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত আবার এ মাত্রা ৪৫ ডিবি, ৬০ ডিবি ও ৭০ ডিবি।
 ব্যক্তিগত পর্যায়ের আত্মরক্ষা: প্লাগ, ইয়ার-মাফ ইত্যাদি ব্যবহার করে ১৫ ডিবি পর্যন্ত শব্দদূষণ রোধ করা যায়।
উপসংহার: চালক যখন হাইড্রোলিক হর্ন থেকে হাত সরাবেই না, তখন পাঠক আপনাকে কানের ফুটোয় হাত রেখেই পথ চলতে হবে। যেন এক নীরব প্রতিবাদের মতো।
পরিবেশ-সচেতনতার পথ বেয়ে কিছুদিন আমাদের হয়তো এভাবে কানে হাত রেখেই চলা ভালো।
মিরাজ আহমেদ
নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১২

নাকের দুর্গন্ধে অন্যের দুর্গতি

nose-proble

অনেক সময় অনেকেরই নাকের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। নাকের এ দুর্গন্ধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী নিজেই অনুভব করে থাকেন। তবে একটি রোগ আছে, যে ক্ষেত্রে রোগীর নাকের দুর্গন্ধে অন্যরা নাক চেপে থাকেন বা দূরে সরে যান। কিন্তু রোগী নিজের নাকের দুর্গন্ধ অনুভবই করেন না। কারণ, বিশেষ সেই রোগটির কারণে রোগীর নাকের ঘ্রাণশক্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যায়। নাকের এ দুর্গন্ধ কারও ক্ষেত্রে সাময়িক, কারও ক্ষেত্রে স্থায়ী রূপ লাভ করে। নাকের এ ব্যতিক্রমী রোগের নাম এট্রোফিক রাইনাইটিস। এ রোগে নাকের ঝিল্লি ধীরে ধীরে মরে যায়। নাকের দুর্গন্ধ অনেক কারণে হয়ে থাকে। তবে যেসব কারণে সাধারণত নাকে দুর্গন্ধ হয় এবং রোগী নিজেও তা টের পান, সেগুলো হচ্ছে—সাইনোসাইটিস, নাকের প্রদাহ বা ইনফেকশন, নাকের মধ্যে বাইরের কোনো জিনিস ঢুকে থাকা ইত্যাদি।
এট্রোফিক রাইনাইটিস নাকের এমন একটি রোগ, যাতে নাসারন্ধ্রের ঝিল্লি এবং নাকের ভেতরের দুই পাশের হাড় বা টারবিনেটগুলোকে আবৃত করে রাখা ঝিল্লির দীর্ঘমেয়াদি এমন একটি পরিবর্তন হয়, যাতে ঝিল্লিগুলো ক্রমশ মরে গিয়ে চুপসে যেতে থাকে। ফলে নাকের মধ্যকার জায়গা বেড়ে যায় এবং নাকের মধ্যে মরা ঝিল্লির স্তর বা বষ্টি খসে পড়ে, পচে যায় ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এট্রোপিক রাইনাইটিস সাধারণত দুই ধরনের—প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।
প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিস
প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিসের কারণ এখনো অজানা। তবে কারণ অনুসন্ধানের জন্য কিছু তত্ত্বকে এ ক্ষেত্রে দায়ী বলে গণ্য করা হয়। যেমন—  রোগের উত্তরাধিকার: যদি পরিবারে কারও এ রোগ থাকে, তবে অন্যদের ভবিষ্যতে এ রোগ হতে পারে বলে মনে করা হয়।
 হরমোনজনিত বিঘ্নতা: এ ক্ষেত্রে সাধারণত পিউবারটি বা যৌবনোদ্গমের সময় এ সমস্যা শুরু হয়। মেয়েদের মধ্যেই বেশি হয়। দুর্গন্ধ এবং নাকে মরা ঝিল্লির শুকনো খণ্ড বা ক্রাস্ট জমার প্রবণতা মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়ার পর কমে যায় বা চলে যায়।
 বর্ণভেদ: সাদাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা কালোদের তুলনায় কিছু বেশি।
অপুষ্টিজনিত কারণ: ভিটামিন এ, ডি এবং আয়রন অথবা খাবারের অন্য কোনো খাদ্যোপাদানের অভাবে এটি হতে পারে।
ইনফেকশন: এট্রোফিক রাইনাইটিসের রোগীর নাকের শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে যেসব জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, সেগুলো হলো ক্লেবসেলা ওজায়েনা, ডিপথেরয়েড, পি ভালগারিস, ই-কোলাই, স্ট্যাফাইলোক্কাই, স্ট্রেপটোক্কাই। তবে এসব জীবাণুর সবই দ্বিতীয় ধাপে ইনফেকশন সৃষ্টি করে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
স্ববিরোধী দেহ প্রতিরক্ষা: ভাইরাল ইনফেকশন এবং অন্য কিছু অচেনা উপাদান রয়েছে, যা নাকের এ সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াকে উসকে দেয়।
যেসব উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা যায়
সাধারণত মেয়েদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। যৌবনের শুরুতেই এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। দুর্গন্ধের জন্য রোগীর কাছে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু নাকের ঘ্রাণশক্তি বহনকারী স্নায়ু নষ্ট হওয়ার কারণে রোগী এ দুর্গন্ধের কিছুই অনুভব করে না। এ ছাড়া যদিও রোগীর নাকের ভেতরের পথ প্রশস্ত থাকে, তার পরও রোগী নাক বন্ধ থাকার অভিযোগ করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে রোগীর নাকের মধ্যে মরা চামড়ার অনেকগুলো খণ্ড বা বষ্টি আটকে থাকে, ফলে নাক বন্ধ মনে হয়। এই বষ্টিগুলো টেনে বের করার সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। নাক পর্যবেক্ষণ করলে রোগীর নাকের মধ্যে সবুজাভ কিংবা হালকা ধূসর রঙের বষ্টি বা ময়লা খণ্ড দেখা যায়। নাকের পাশের দিকে অবস্থিত শেডের মতো ওপর-নিচ করে বসানো তিনটি হাড় ক্ষয় হয়ে গিয়ে সামান্য উঁচু দাগের মতো মনে হয়। অনেক সময় মধ্যবর্তী দেয়ালটিতে ছিদ্র থাকতে পারে। কারও কারও নাক বসে যেতে পারে। নাকের সাইনাসের এক্স-রে করে সাইনাসগুলো ঘোলাটে দেখা যায়। সাইনাসগুলো পরিপূর্ণতা লাভ না করার জন্য আকারে ছোট হয়। সাইনাসের দেয়ালগুলো মোটা থাকে।
চিকিৎসা
 ওষুধে চিকিৎসা: শুধু ওষুধে এ রোগ পুরোপুরি সারবে, এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নাককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা। এ জন্য নাক পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। একটি বিশেষ সিরিঞ্জের (হিগিনসন্স সিরিঞ্জ) সাহায্যে ক্ষারজাতীয় দ্রবণ দিয়ে নাক দৈনিক দু-তিনবার পরিষ্কার করা যায়। এ ছাড়া গ্লিসারিনে ২৫ শতাংশ গ্লুকোজ মেশানো সলিউশন নাক পরিষ্কার করার পর নাকে দিতে হয়। এই সলিউশন প্রোটিন নষ্টকারী জীবাণুকে বেড়ে উঠতে বাধা দেয়। নাকের মধ্যে স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা স্প্রে ব্যবহার করা যায়। অস্ট্রাডিওল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে আক্রান্ত স্থানের রক্তের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য। স্ট্রেপটোমাইসিন নামক ওষুধও দেওয়া যেতে পারে।
অপারেশনে চিকিৎসা: ইয়াংস অপারেশন নামে একটি অপারেশন আছে। এই অপারেশনের মাধ্যমে নাকের ছিদ্র অন্তত ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাক খুলে দেওয়ার পর আবারও একই অবস্থা দেখা দেয়।
সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস
নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে যখন একই সমস্যা হয়, তখন তাকে বলা হয় সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস। যেসব রোগে এ অবস্থা হয়, সেগুলো হলো সিফিলিস, লেপ্রোসি বা কুষ্ঠ, লুপাস এবং রাইনোস্ক্লেরোমা, কোনো রোগের জন্য নাকে রেডিওথেরাপি দিলে কিংবা নাকের কিছু অপারেশনে (অতিরিক্ত টারবিনেকটমি) একই ধরনের সমস্যা হতে পারে। নাকের হাড় একদিকে বাঁকা হয়ে থাকলে অন্যদিকের ছিদ্রতেও একই সমস্যা তৈরি হতে পারে।
রোগের পরিণাম
এ রোগ সহজে সারে না। রোগ সারানোর ব্যাপারে রোগীকে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। নিয়মের একটু ব্যত্যয় হলেই রোগের উপসর্গগুলো বেড়ে যায়। তবে মধ্যবয়সে অনেকেরই রোগ ভালো হয়ে যায়।
সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, নাক, কান ও গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৩, ২০১২

কান চুলকানোর আড়ালে…

ears-allergy

কিছুদিন ধরে কটনবাড খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে আপনার। কোন ড্রয়ারে, কোথায় রাখা আছে, ভালোই জানা হয়ে গেছে। কারণ, কান চুলকায়। এমনটি হয় অনেকেরই। অসুখটির নাম অটোমাইকোসিস।
কেন হয়
 রোগটা সেসব দেশেই বেশি হয়, যেখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। যেমন—বাংলাদেশ।
 রোগটা তাঁদেরই ভেতর বেশি হয়, যাঁরা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।
 যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অথবা যাঁদের রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব।
কারা দায়ী
চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণু থেকে। এরা হচ্ছে উদ্ভিদ। দেহের অন্যত্র এটি থেকে দাদসহ নানা রোগ হয়। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ডারমাটোফাইট ও একটিনোমাইসেসের মাধ্যমেও কখনো কখনো রোগটি হতে পারে।
উপসর্গ
 কান বন্ধ হয়ে আছে—এমন উপলব্ধি;
 কানে অস্বস্তি;
 কান থেকে ধূসর, সবুজ, হলুদ বা সাদা রঙের নিঃসরণ বেরিয়ে আসতে পারে;
 জমা হতে পারে ভেজা খবরের কাগজের মতো ময়লা।
চিকিৎসা
 কানের ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
 ছত্রাকবিনাশী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন—
নাইস্টাটিন ক্রিম, ক্লোট্রিমাজল, ইকোনাজল ও জেনশিয়ান ভায়োলেট।
ওষুধগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে হাইড্রোকর্টিসন যুক্ত থাকলে তা ড্রাগের প্রতি টিস্যুর অতিসংবেদনশীলতা রোধ করে এবং কানে জ্বালা করার ভয় কমায়। ক্রিম বা ফোঁটা আকারে এগুলো ব্যবহার করা যায়। দুই সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করলে রোগটি ফিরে আসার আশঙ্কা কমে যায়।
 অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ।
এ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসাও করণীয় হয়ে পড়ে।
খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি বহিঃকর্ণের। কিন্তু কানপাকা রোগীদের অর্থাৎ, মধ্যকর্ণের প্রদাহের কারণে যাদের কানের পর্দায় ছিদ্র থাকে, তাদের কানেও মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে।
প্রতিরোধ
 চাই সাধারণ স্বাস্থ্যকুশলতা উন্নয়নের প্রয়াস এবং ভিটামিন ও পুষ্টির মান বাড়ানো;
 মাঝেমধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নেওয়া;
 ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা;
 নিরুৎসাহিত করা চাই কান চুলকানোয় দেশলাইয়ের কাঠি, মোড়ানো রুমাল, মুরগির পালক, চাবি ও কটনবাডের ব্যবহার।
মিরাজ আহমেদ
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, মিটফোর্ড হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৭, ২০১২