বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বর্ষায় কানের অসুখ : কানে ছত্রাকের সংক্রমণ

ears

কয়েক দিন ধরেই শুভর (ছদ্মনাম) মন ভালো নেই। কান দুটো কেমন যেন ভারী হয়ে আছে, চুলকাচ্ছে, ভেজা ভেজা লাগছে। কটন বাড দিলে কালো ময়লা আসছে। খুবই অস্বস্তিকর অনুভূতি। বন্ধুরা টের পেলে কী যে হয়!
অন্যদিকে ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে পুষ্পিতার (ছদ্মনাম) চিন্তার শেষ নেই। কয়েক দিন ধরে মাঝে মাঝে ব্যথা বলছে। কান পরিষ্কার করলে ভেজা কাগজের মতো কী যেন বের হচ্ছে। বাচ্চার কান পরীক্ষা না করালেই নয়, ভাবছেন পুষ্পিতা।
আসলে স্থান-কাল-পাত্র ভিন্ন ভিন্ন হলেও সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার জন্য। যার নাম অটোমাইকোসিস।
ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখানে রোদ, আর্দ্রতা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাব ছত্রাক সংক্রমণের জন্য অনুকূল হিসেবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে ছত্রাক সংক্রমণ সহজতর হয়।
ছত্রাক সংক্রমণ: কারা দায়ী?
বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে।
এদের মধ্যে কোনোটি দেখতে কালো, কোনোটি বাদামি, সাদা আবার কোনোটি ভেজা কাগজের মতো আঠাল।
ছত্রাক সংক্রমণ হলে কেমন করে জানা যাবে আসলেই কি সংক্রমণ হয়েছে অথবা কী ধরনের ছত্রাক সেখানে আছে। ছত্রাক সংক্রমণ হলে রোগীরা যেসব সমস্যার কথা বলে বা যেসব লক্ষণ আমরা পাই সেগুলো হলো:
 কানে অস্বস্তিকর অনুভূতি হওয়া।
 কানে ব্যথা হওয়া।
 কান বন্ধ হয়ে যাওয়া।
 কান চুলকানো।
 কানে সামান্য কম শুনতে পাওয়া।
 কান ভেজা ভেজা লাগে। কান থেকে মাঝেমধ্যে তরল পদার্থের নিঃসরণ হওয়া। তবে এর পরিমাণ সাধারণত বেশি হয় না।
এসব লক্ষণ নিয়ে রোগী যখন নাক কান গলা রোগের চিকিৎসকের কাছে আসে তখন কান পরীক্ষা করলে যা পাওয়া যাবে:
 কান বলতে বাইরে থেকে যেটা দেখি সে অংশটা সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। খুব বেশি সংক্রমণ হলে কানের চামড়া আক্রান্ত হতে পারে।
 কানের ছিদ্র থেকে পর্দা পর্যন্ত প্রায় ইঞ্চি খানেক লম্বা যে পথ সেখানে ছত্রাকের দলা পাওয়া যেতে পারে।
 যদি ছত্রাকের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয় তাহলে সেখানে তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়। এমনকি দুর্গন্ধ হতে পারে। ছত্রাকের দলা কালো, বাদামি, সাদা অথবা ভেজা কাগজের মতো দেখতে হবে।
 কানের পর্দা স্বাভাবিক থাকবে। তবে কখনো কখনো সংক্রমণের তীব্রতার ওপরে নির্ভর করে লাল হতেও পারে।
কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি?
আছে। সময় ও সুযোগ থাকলে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
 অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে কান থেকে ছত্রাকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
 যেসব রোগীর বারবার কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা যেতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কানে ছত্রাকের সংক্রমণের হার বেশি।
রোগনির্ণয় তো হলো, এবার চিকিৎসা দেওয়ার পালা।
চিকিৎসা দেব। কীভাবে দেব? কী করব?
একজন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ভালো করে রোগের বিবরণ শুনে, কান পরীক্ষা করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ধীরে ধীরে কান থেকে ছত্রাকের দলা বের করবেন। কানটা শুকনো করবেন।
তারপর ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ দেবেন। বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ওষুধ পাওয়া যায়। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া যায়। কান সেরে যাবে।
এর পাশাপাশি ডায়াবেটিক থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওষুধ ব্যবহার শেষে পুনরায় কান পরীক্ষা করাতে হবে। এর পাশাপাশি কানে ব্যথা হলে ব্যথানাশক বড়ি খেতে হবে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয়, তাহলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
কানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন বড়ি থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
প্রতি ক্ষেত্রেই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ এবং ফলোআপ করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে রক্ষা পেতে হলে সব সময়ের জন্য আমাদের যা করণীয় তা হলো:
 দেশলাইয়ের কাঠি, কটন বাড, মুরগির পাখা, ঝাড়ুর শলা, কাপড়, কলমের ক্যাপ প্রভৃতি দিয়ে কান খোঁচানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
 রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করে তাদের দিয়ে কান পরিষ্কার না করানো।
 নোংরা ময়লা পানিতে গোসল না করা।
 ডুব দিয়ে গোসল না করা।
 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
মো. নাজমুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, নাক কান গলা রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১১, ২০১২
কবজি ব্যথার সহজ সমাধান
kobji-bytha
স্বল্প পরিচিত রোগ: কারপাল টানেল সিনড্রোম
হাতের কবজিতে ব্যথা নিয়ে রোগীএলেন। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীতে ব্যথাটা বেশি অনুভূত হয়। কখনো কখনো বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশ ঘেঁষে খানিকটা ওপরের দিকেও ব্যথা হয়। পাশাপাশি রাতে হাত অবশ হয়ে আসে। অনেক সময় অস্থির অনুভূতির কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন বৃদ্ধাঙ্গুল কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। এসব দেখেশুনে তিনি বললেন, এ রোগের নাম কারপাল টানেল সিনড্রোম।
কেন এমন হয়?
হাইপোথাইরয়েডিজম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, নিয়মিত মদ্যপান, ওজন বাড়া, গর্ভধারণ করা প্রভৃতি কারণের জন্য এই কারপাল টানেল ছোট হয়ে যায়। আবার কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও হতে পারে। মধ্যবর্তী বয়সের মহিলারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কবজির হাড় ভেঙে সঠিকভাবে জোড়া না লাগলে বা দীর্ঘদিন প্লাস্টার করে রাখার ফলে কারপাল টানেলে চাপ পড়তে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
এ রোগের কারণে বুড়ো আঙুল থেকে মধ্যমা পর্যন্ত তিন আঙুলে শিরশির ও অবশ অনুভূতি, সঙ্গে ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত বুড়ো আঙুল ও মাঝের তিন আঙুল আক্রান্ত হলেও কনিষ্ঠ আঙুল কখনো আক্রান্ত হয় না। রাতের বেলায় রক্ত সঞ্চালন কম হওয়ার কারণে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। বুড়ো আঙুলের গোড়ার মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও আঙুল দুর্বল হয়ে যায়, কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। হাত মৃদু ঝাঁকালে বা ঝুলিয়ে রাখলে একটু আরাম অনুভব হয়। ব্যথা কবজি থেকে ওপরের দিকে উঠতে পারে।
পরীক্ষা: রোগ নির্ণয়ের জন্য নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি বা নেসিভি পরীক্ষাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নার্ভ অনেকটা ইলেকট্রিক তারের মতো, এর ভেতর দিয়ে তথ্যগুলো বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মতো প্রবাহিত হয়।
ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ চলাচলের গতি মাপতে যেমন মিটার ব্যবহার করেন, নার্ভ কনডাকশন টেস্টের মাধ্যমে নার্ভের ভেতরের বিদ্যুৎ চলাচলের গতি ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
এরপর আসে ইএমজি বা ইলেকট্রোমায়োগ্রাম পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মাংসপেশির নার্ভ সাপ্লাই সম্পর্কে বোঝা যায়। কবজি ও নার্ভের গঠন বোঝার জন্য কবজির সিটি স্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ ছাড়া সহায়ক পরীক্ষা হিসেবে আক্রান্ত হাতের এক্স-রে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের পরীক্ষা অপরিহার্য।
চিকিৎসা
মৃদু ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কবজির বিশ্রাম, যার জন্য কবজির ওপরে চাপ পড়ে এমন সব ধরনের কাজকর্ম পরিহার করা উচিত। যেমন:
 কাপড় ধোয়া
 টিউবওয়েল চাপা
 একটানা লেখালেখি না করা
 দা, কোদাল বা কুড়াল দিয়ে কিছু কাটাকাটি করা
 ড্রিল মেশিন ব্যবহার করা
 হাতে ভারী ওজন বহন করা
 রাতে সিপ্রন্ট বেঁধে ঘুমানো বেশ কার্যকরী।
 সঙ্গে ব্যথার ওষুধ এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন—সব মিলিয়ে কিছুটা সুফল দেয়। একটু বেশি ব্যথা হলে অনেকে সরাসরি অবশের ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। এতে সাময়িক উপকার পাওয়া যেতে পারে, আবার ইনজেকশন নার্ভের মধ্যে ঢুকে গেলে হাত আরও অবশ হয়ে যেতে পারে।
 এসব চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলে অপারেশন করা যায়।
মূলত এ চিকিৎসায় অপারেশন কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ফলাফল অত্যন্ত আশানুরূপ। অপারেশনের পরে ব্যথা সঙ্গে সঙ্গেই কমে যায়। অবশ ভাব কয়েক দিন পরে কমে আর মাংসপেশির সবলতা কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরে আসে।
 আধুনিক সময়ে এন্ডোসকোপির মাধ্যমে কম কাটাছেঁড়া করে এ অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কবজির একটু নিচের দিকে ছোট ছিদ্র করেই অপারেশন করা হয়, যেখানে স্থানীয়ভাবে অবশ করে অপারেশন করা হয়, এমনকি রোগীকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয় না।
সুদিপ্ত কুমার মুখার্জী
নিউরোসার্জন, ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট আব নিউরোসায়েন্স, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৯, ২০১২

দাঁত তো মাজি তবু…

brush-teeth

আমরা প্রায় অভিযোগ পাই যে অনেকেই নিয়মিত মুখ পরিষ্কারের চেষ্টা করে। তার পরও দাঁতে গর্ত বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে এমনটা হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেককে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ আর সঠিক নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ব্রাশ এক কথা নয়। দাঁতের গঠন ও অবস্থান অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের নিয়ম শিখতে হবে এবং তা নিয়মিত মেনে চলতে হবে।
সঠিকভাবে ব্রাশ করলেও দুটি দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রাশ পৌঁছে না, সে ক্ষেত্রে সেখানে খাদ্যকণা ও জীবাণু লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কারের জন্য ডেন্টাল ফ্লস নামক বিশেষ সুতা ব্যবহার শিখতে হবে। মাঝেমধ্যে ‘এন্টি প্ল্যাক’ মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা হয়।
দাঁতের অস্বাভাবিক গঠন
জন্মগত কারণে অনেকের দাঁত ভঙ্গুর হয়। আবার কারও কারও দাঁতের বর্ধনের পৃষ্ঠে অস্বাভাবিক সূক্ষ্ম গভীর ফাটল থাকে, যেখানে ব্রাশ পৌঁছে না। এ ধরনের জন্মগত ও গঠনে ত্রুটিপূর্ণ দাঁতের ক্ষেত্রে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শের আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নেওয়া যায়।
দাঁতের অস্বাভাবিক অবস্থান
উঁচু, নিচু, ফাঁকা, এলোমেলো দাঁত পরিষ্কার রাখা তুলনামূলক কষ্টসাধ্য, এই জাতীয় দাঁতে দ্রুত প্ল্যাক জমে ও মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। অর্থোডন্টিক ও কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসার মাধ্যমে অবস্থানগত একটিকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরানো সম্ভব।
নিঃসৃত লালার ধরন
যাদের মুখে লালার ধরন ঘন, আঠালো বা তুলনামূলক কম, তাদের দাঁত ও মাড়িতে রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। শারীরিক ও মানসিক নানা কারণে লালা নিঃসরণে তারতম্য হতে পারে। যে ক্ষেত্রে কারণ চিহ্নিত করে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে দিনে ১১ বা ১২ গ্লাস পানি পান, চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবানোসহ কৃত্রিম লালা ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস
যারা আঁশযুক্ত খাবার, দেশীয় ফলমূল, দুধ, ডিম, শাকসবজি ছোট মাছ প্রভৃতির পরিবর্তে মিষ্টি, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, ফাস্টফুড, কোমলপানীয় বেশি খায় এবং যারা ধূমপান, জর্দা ও গুল ব্যবহার করে, তাদের ডেন্টাল রোগের আশঙ্কা থাকে।
শারীরিক অসুস্থতা
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি, অপুষ্টি ইত্যাদি নানা অসুস্থতায় যেমন ডেন্টাল সমস্যা তৈরি হয়, তেমনি নানা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবও দাঁত ও মাড়ির ওপর পড়ে।
আমাদের মুখে অসংখ্য প্রজাতীয় জীবাণুর অভয়ারণ্য। অনুকূল পরিবেশ পেলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই সুস্থ মুখ ও সুন্দর হাসি ধরে রাখতে নিয়মিত এবং সঠিক নিয়মে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। পাশাপাশি উল্লিখিত কারণগুলোর দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মো. আসাফুজ্জোহা, দন্ত বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২

কানের পর্দা ফেটে গেলে

kaner porda

বিভিন্ন কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন—
 বাতাসের চাপের তারতম্য
 তরল পদার্থের চাপ
 কঠিন বস্তুর আঘাত।
বায়ুচাপের কারণে কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার পেছনে থাকতে পারে—
 কানের ওপরে ঘুষি বা থাপড়ের আঘাত
 বোমা বা পটকার বিস্ফোরণ।
এসব ক্ষেত্রে পর্দার সামনের এবং নিচের দিকের অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তরলজনিত পারফোরেশনের কারণ হতে পারে:
 সিরিঞ্জিং
 ক্যালরিক টেস্ট
কঠিন বস্তুর কারণে পর্দা ছিন্ন হতে পারে, যদি বাইরে থেকে কোনো কিছু কানে ঢুকে যায় অথবা সেই ঢুকে পড়া বস্তুকে যদি অপসারণের প্রয়াস না নেওয়া হয়।
চিকিৎসা: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কানের পর্দা এমনি এমনি জোড়া লেগে যায়। চিকিৎসার তেমন কোনো কিছু প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, যদি:
 টিস্যু নষ্ট হয়ে থাকে
 পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ সৃষ্টি হয়।
অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগানো যায়।
পারফোরেশন ছাড়া কানে আঘাত থেকে সৃষ্টি হতে পারে:
 হাড়ের বিচ্যুতি
 অন্তঃকর্ণের ক্ষতি
 শোঁ শোঁ শব্দ
 ফেসিয়াল নার্ভের ক্ষতি।
চিকিৎসককে নিজে থেকেও ছুরি চালাতে হয় কানের পর্দায়, যখন তিনি মাইরিংগোটমি অপারেশন করেন। মধ্যকর্ণের প্রদাহ এবং পানি জমে গিয়ে শ্রুতি-স্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য ওই চিকিৎসা তো করাই হয়। সেই ছিদ্রকে নির্দিষ্ট সময়কাল সচল রাখার জন্য গ্রমেট নামের ছোট বায়ু-বোতাম বসিয়ে দেন অটোলজিস্টরা। কিন্তু যেনতেন কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে আমরা পরিতাপ না করে পারি না।
পর্দার ক্ষত ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জোড়া লাগে না এবং আর পাঁচজন কানপাকা রোগীর মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়। সামাজিক অস্থিরতার কারণে, অসচেতনতার কারণে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার যে প্রবণতা আমাদের চারপাশে, পরিবারে ও সমাজে, এ কারণে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়।
মিরাজ আহমেদ
নাক-কান-গলা বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২

শব্দ বেশি তাই কানে শুনি না

air pollution

যদি শব্দদূষণের কারণে রোগীর শ্রুতির যথার্থতা হ্রাস পায়, তাকে বলা হয় শব্দজনিত শ্রুতিহ্রাস। এটি একটি অসুস্থতা।
নয়েজ বা শব্দদূষণ: যে শব্দ শারীরিক ও মানসিক আঘাত সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির বিরক্তি উৎপাদন করে, তাকে নয়েজ বা শব্দদূষণ বলা হয়।
শব্দদূষণের ফল: ক. কানের
ক্ষণস্থায়ী শ্রুতি হ্রাস: কনসার্ট বা মাইকের শব্দ শোনার পর ঘটতে পারে।
স্থায়ী শ্রুতি হ্রাস: যদি ক্ষণস্থায়ী শ্রুতি হ্রাসের কারণটি বারবার ঘটতে থাকে অথবা আক্রান্ত হওয়ার একটি মাত্র ঘটনা থেকেও স্থায়ী শ্রুতিভ্রংশ হতে পারে। এতে শ্রবণশক্তি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে না।
অন্যান্য প্রতিক্রিয়া: অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের উত্তেজনা এবং নর-অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের ফলে—মানসিক পীড়ন, অভিনিবেশের সমস্যা, অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি। দ্রুত হূৎকম্পন, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, গর্ভস্থ শিশুর সমস্যা।
শব্দজনিত আঘাত: একক এবং তীব্র শব্দের জন্য তাৎক্ষণিক শ্রুতি হ্রাস ঘটতে পারে, যেমন—বিস্ফোরণ, বন্দুকের গুলি অথবা শক্তিশালী পটকার শব্দ।
রাইফেল বা বন্দুকের গুলির শব্দমাত্রা থাকে ১৪০ থেকে ২৭০ ডেসিবেলের মধ্যে। আকস্মিক উচ্চমাত্রার শব্দ আউটার হেয়ার সেল এবং রিজনারস মেমব্রেনের ক্ষতি করতে পারে। এরা হচ্ছে অন্তঃকর্ণের বিভিন্ন অংশ। পরিপাকীয় এবং গঠনগত দুই ধরনের ক্ষতির শিকার হয় কোষগুলো। ফ্রি রেডিকেলজনিত ক্ষতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরিপাকজনিত রূপান্তর ঘটলে ক্ষণস্থায়ী এবং গঠনগত রূপান্তরের ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রুতিভ্রংশ হয়।
ক্ষতিকর শব্দের মাত্রা: কতটা শব্দ এবং কতক্ষণ ধরে শোনা হচ্ছে তার ওপর ক্ষতি নির্ভর করে। ৮৫ ডিবির চেয়ে বেশি শব্দকে ন্যূনতম ধ্বংসাত্মক শব্দ বলা হয়।
নিরাপদ শব্দসীমা: ৮৫ ডিবি শব্দের ভেতর দৈনিক আট ঘণ্টা করে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন থাকা নিরাপদ। ১০০ ডিবি শব্দ মাত্রায় প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন থাকা নিরাপদ।
শব্দদূষণের উৎস: আধুনিক যন্ত্রপাতি— হাইড্রোলিক হর্ন, জেট ইঞ্জিন, নির্মাণকর্ম ও কনসার্ট।
সামাজিক শব্দদূষণ—ট্রাফিক হর্ন, গার্হস্থ্য খেলনা ও মাইকিং। শিল্প কারখানার শব্দদূষণ। ট্রাফিকজনিত শব্দদূষণ।
উপসর্গ: কম শোনা—পুরুষ ও মধ্যবয়সীদের বেশি হয়। টেলিফোনে কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে।
শোঁ শোঁ শব্দ—ঘুম, মেজাজ ও আলাপচারিতায় সমস্যা হয়। কানে ব্যথা, অতি শব্দ সংবেদনশীলতা, ঘুম ঘুম ভাব, মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত ও মনোযোগের সমস্যা।
এ ছাড়া ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা ও ভীতিগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা:  ব্যাখ্যা  পুনর্বাসন: হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র।
প্রতিরোধ: শব্দদূষণ থেকে দূরে থাকা। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসুখের সুচারু নিয়ন্ত্রণ ও পেশার পরিবর্তন।
ওষুধপত্র: অন্তঃকর্ণের ওপর ক্রিয়াশীল ওষুধ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অটো-টক্সিক ওষুধ বর্জন।
 ইয়ার প্লাগ ব্যবহারে অতিরিক্ত শব্দ কানে ঢুকতে না দেওয়া।
 যারা রিস্ক গ্রুপে আছেন, তাঁদের নিয়মিত হিয়ারিং টেস্ট করানো।
 প্রকৌশলগত ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতির শব্দ উৎপাদন মাত্রা কমিয়ে আনা বা ‘নীরব’ যন্ত্রপাতির অন্বেষণ করা।
 শব্দ হ্রাসে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা: আবাসিক বা নীরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকার জন্য পৃথক পৃথক শব্দমাত্রা বেঁধে দিয়ে সরকার শব্দদূষণ রোধের চেষ্টা করে। যেমন— সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই তিন ধরনের এলাকায় যথাক্রমে ৫০ ডিবি, ৭০ ডিবি ও ৭৫ ডিবি শব্দ অনুমোদন লাভ করে।
রাত নয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত আবার এ মাত্রা ৪৫ ডিবি, ৬০ ডিবি ও ৭০ ডিবি।
 ব্যক্তিগত পর্যায়ের আত্মরক্ষা: প্লাগ, ইয়ার-মাফ ইত্যাদি ব্যবহার করে ১৫ ডিবি পর্যন্ত শব্দদূষণ রোধ করা যায়।
উপসংহার: চালক যখন হাইড্রোলিক হর্ন থেকে হাত সরাবেই না, তখন পাঠক আপনাকে কানের ফুটোয় হাত রেখেই পথ চলতে হবে। যেন এক নীরব প্রতিবাদের মতো।
পরিবেশ-সচেতনতার পথ বেয়ে কিছুদিন আমাদের হয়তো এভাবে কানে হাত রেখেই চলা ভালো।
মিরাজ আহমেদ
নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১২

নাকের দুর্গন্ধে অন্যের দুর্গতি

nose-proble

অনেক সময় অনেকেরই নাকের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। নাকের এ দুর্গন্ধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী নিজেই অনুভব করে থাকেন। তবে একটি রোগ আছে, যে ক্ষেত্রে রোগীর নাকের দুর্গন্ধে অন্যরা নাক চেপে থাকেন বা দূরে সরে যান। কিন্তু রোগী নিজের নাকের দুর্গন্ধ অনুভবই করেন না। কারণ, বিশেষ সেই রোগটির কারণে রোগীর নাকের ঘ্রাণশক্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যায়। নাকের এ দুর্গন্ধ কারও ক্ষেত্রে সাময়িক, কারও ক্ষেত্রে স্থায়ী রূপ লাভ করে। নাকের এ ব্যতিক্রমী রোগের নাম এট্রোফিক রাইনাইটিস। এ রোগে নাকের ঝিল্লি ধীরে ধীরে মরে যায়। নাকের দুর্গন্ধ অনেক কারণে হয়ে থাকে। তবে যেসব কারণে সাধারণত নাকে দুর্গন্ধ হয় এবং রোগী নিজেও তা টের পান, সেগুলো হচ্ছে—সাইনোসাইটিস, নাকের প্রদাহ বা ইনফেকশন, নাকের মধ্যে বাইরের কোনো জিনিস ঢুকে থাকা ইত্যাদি।
এট্রোফিক রাইনাইটিস নাকের এমন একটি রোগ, যাতে নাসারন্ধ্রের ঝিল্লি এবং নাকের ভেতরের দুই পাশের হাড় বা টারবিনেটগুলোকে আবৃত করে রাখা ঝিল্লির দীর্ঘমেয়াদি এমন একটি পরিবর্তন হয়, যাতে ঝিল্লিগুলো ক্রমশ মরে গিয়ে চুপসে যেতে থাকে। ফলে নাকের মধ্যকার জায়গা বেড়ে যায় এবং নাকের মধ্যে মরা ঝিল্লির স্তর বা বষ্টি খসে পড়ে, পচে যায় ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এট্রোপিক রাইনাইটিস সাধারণত দুই ধরনের—প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।
প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিস
প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিসের কারণ এখনো অজানা। তবে কারণ অনুসন্ধানের জন্য কিছু তত্ত্বকে এ ক্ষেত্রে দায়ী বলে গণ্য করা হয়। যেমন—  রোগের উত্তরাধিকার: যদি পরিবারে কারও এ রোগ থাকে, তবে অন্যদের ভবিষ্যতে এ রোগ হতে পারে বলে মনে করা হয়।
 হরমোনজনিত বিঘ্নতা: এ ক্ষেত্রে সাধারণত পিউবারটি বা যৌবনোদ্গমের সময় এ সমস্যা শুরু হয়। মেয়েদের মধ্যেই বেশি হয়। দুর্গন্ধ এবং নাকে মরা ঝিল্লির শুকনো খণ্ড বা ক্রাস্ট জমার প্রবণতা মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়ার পর কমে যায় বা চলে যায়।
 বর্ণভেদ: সাদাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা কালোদের তুলনায় কিছু বেশি।
অপুষ্টিজনিত কারণ: ভিটামিন এ, ডি এবং আয়রন অথবা খাবারের অন্য কোনো খাদ্যোপাদানের অভাবে এটি হতে পারে।
ইনফেকশন: এট্রোফিক রাইনাইটিসের রোগীর নাকের শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে যেসব জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, সেগুলো হলো ক্লেবসেলা ওজায়েনা, ডিপথেরয়েড, পি ভালগারিস, ই-কোলাই, স্ট্যাফাইলোক্কাই, স্ট্রেপটোক্কাই। তবে এসব জীবাণুর সবই দ্বিতীয় ধাপে ইনফেকশন সৃষ্টি করে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
স্ববিরোধী দেহ প্রতিরক্ষা: ভাইরাল ইনফেকশন এবং অন্য কিছু অচেনা উপাদান রয়েছে, যা নাকের এ সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াকে উসকে দেয়।
যেসব উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা যায়
সাধারণত মেয়েদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। যৌবনের শুরুতেই এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। দুর্গন্ধের জন্য রোগীর কাছে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু নাকের ঘ্রাণশক্তি বহনকারী স্নায়ু নষ্ট হওয়ার কারণে রোগী এ দুর্গন্ধের কিছুই অনুভব করে না। এ ছাড়া যদিও রোগীর নাকের ভেতরের পথ প্রশস্ত থাকে, তার পরও রোগী নাক বন্ধ থাকার অভিযোগ করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে রোগীর নাকের মধ্যে মরা চামড়ার অনেকগুলো খণ্ড বা বষ্টি আটকে থাকে, ফলে নাক বন্ধ মনে হয়। এই বষ্টিগুলো টেনে বের করার সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। নাক পর্যবেক্ষণ করলে রোগীর নাকের মধ্যে সবুজাভ কিংবা হালকা ধূসর রঙের বষ্টি বা ময়লা খণ্ড দেখা যায়। নাকের পাশের দিকে অবস্থিত শেডের মতো ওপর-নিচ করে বসানো তিনটি হাড় ক্ষয় হয়ে গিয়ে সামান্য উঁচু দাগের মতো মনে হয়। অনেক সময় মধ্যবর্তী দেয়ালটিতে ছিদ্র থাকতে পারে। কারও কারও নাক বসে যেতে পারে। নাকের সাইনাসের এক্স-রে করে সাইনাসগুলো ঘোলাটে দেখা যায়। সাইনাসগুলো পরিপূর্ণতা লাভ না করার জন্য আকারে ছোট হয়। সাইনাসের দেয়ালগুলো মোটা থাকে।
চিকিৎসা
 ওষুধে চিকিৎসা: শুধু ওষুধে এ রোগ পুরোপুরি সারবে, এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নাককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা। এ জন্য নাক পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। একটি বিশেষ সিরিঞ্জের (হিগিনসন্স সিরিঞ্জ) সাহায্যে ক্ষারজাতীয় দ্রবণ দিয়ে নাক দৈনিক দু-তিনবার পরিষ্কার করা যায়। এ ছাড়া গ্লিসারিনে ২৫ শতাংশ গ্লুকোজ মেশানো সলিউশন নাক পরিষ্কার করার পর নাকে দিতে হয়। এই সলিউশন প্রোটিন নষ্টকারী জীবাণুকে বেড়ে উঠতে বাধা দেয়। নাকের মধ্যে স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা স্প্রে ব্যবহার করা যায়। অস্ট্রাডিওল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে আক্রান্ত স্থানের রক্তের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য। স্ট্রেপটোমাইসিন নামক ওষুধও দেওয়া যেতে পারে।
অপারেশনে চিকিৎসা: ইয়াংস অপারেশন নামে একটি অপারেশন আছে। এই অপারেশনের মাধ্যমে নাকের ছিদ্র অন্তত ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাক খুলে দেওয়ার পর আবারও একই অবস্থা দেখা দেয়।
সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস
নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে যখন একই সমস্যা হয়, তখন তাকে বলা হয় সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস। যেসব রোগে এ অবস্থা হয়, সেগুলো হলো সিফিলিস, লেপ্রোসি বা কুষ্ঠ, লুপাস এবং রাইনোস্ক্লেরোমা, কোনো রোগের জন্য নাকে রেডিওথেরাপি দিলে কিংবা নাকের কিছু অপারেশনে (অতিরিক্ত টারবিনেকটমি) একই ধরনের সমস্যা হতে পারে। নাকের হাড় একদিকে বাঁকা হয়ে থাকলে অন্যদিকের ছিদ্রতেও একই সমস্যা তৈরি হতে পারে।
রোগের পরিণাম
এ রোগ সহজে সারে না। রোগ সারানোর ব্যাপারে রোগীকে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। নিয়মের একটু ব্যত্যয় হলেই রোগের উপসর্গগুলো বেড়ে যায়। তবে মধ্যবয়সে অনেকেরই রোগ ভালো হয়ে যায়।
সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, নাক, কান ও গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৩, ২০১২

কান চুলকানোর আড়ালে…

ears-allergy

কিছুদিন ধরে কটনবাড খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে আপনার। কোন ড্রয়ারে, কোথায় রাখা আছে, ভালোই জানা হয়ে গেছে। কারণ, কান চুলকায়। এমনটি হয় অনেকেরই। অসুখটির নাম অটোমাইকোসিস।
কেন হয়
 রোগটা সেসব দেশেই বেশি হয়, যেখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। যেমন—বাংলাদেশ।
 রোগটা তাঁদেরই ভেতর বেশি হয়, যাঁরা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।
 যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অথবা যাঁদের রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব।
কারা দায়ী
চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণু থেকে। এরা হচ্ছে উদ্ভিদ। দেহের অন্যত্র এটি থেকে দাদসহ নানা রোগ হয়। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ডারমাটোফাইট ও একটিনোমাইসেসের মাধ্যমেও কখনো কখনো রোগটি হতে পারে।
উপসর্গ
 কান বন্ধ হয়ে আছে—এমন উপলব্ধি;
 কানে অস্বস্তি;
 কান থেকে ধূসর, সবুজ, হলুদ বা সাদা রঙের নিঃসরণ বেরিয়ে আসতে পারে;
 জমা হতে পারে ভেজা খবরের কাগজের মতো ময়লা।
চিকিৎসা
 কানের ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
 ছত্রাকবিনাশী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন—
নাইস্টাটিন ক্রিম, ক্লোট্রিমাজল, ইকোনাজল ও জেনশিয়ান ভায়োলেট।
ওষুধগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে হাইড্রোকর্টিসন যুক্ত থাকলে তা ড্রাগের প্রতি টিস্যুর অতিসংবেদনশীলতা রোধ করে এবং কানে জ্বালা করার ভয় কমায়। ক্রিম বা ফোঁটা আকারে এগুলো ব্যবহার করা যায়। দুই সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করলে রোগটি ফিরে আসার আশঙ্কা কমে যায়।
 অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ।
এ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসাও করণীয় হয়ে পড়ে।
খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি বহিঃকর্ণের। কিন্তু কানপাকা রোগীদের অর্থাৎ, মধ্যকর্ণের প্রদাহের কারণে যাদের কানের পর্দায় ছিদ্র থাকে, তাদের কানেও মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে।
প্রতিরোধ
 চাই সাধারণ স্বাস্থ্যকুশলতা উন্নয়নের প্রয়াস এবং ভিটামিন ও পুষ্টির মান বাড়ানো;
 মাঝেমধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নেওয়া;
 ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা;
 নিরুৎসাহিত করা চাই কান চুলকানোয় দেশলাইয়ের কাঠি, মোড়ানো রুমাল, মুরগির পালক, চাবি ও কটনবাডের ব্যবহার।
মিরাজ আহমেদ
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, মিটফোর্ড হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৭, ২০১২

রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ

blood

ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক বা বিপাকীয় রোগ। আর আক্রান্ত রোগীকে এ রোগ বেশ বিপাকেও (বিপদে) ফেলে দিতে পারে। ডায়াবেটিস হলে রক্তের চর্বি বা লিপিডের মাত্রা খারাপের দিকে মোড় নেয়। ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের পরিমাণ কমে যায় আর খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে বলে ডায়াবেটিক ডিসলিপিডেমিয়া বা ডায়াবেটিসের জন্য রক্তের লিপিডের টালমাটাল অবস্থা। এতে হূদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রক্তের লিপিডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সুতরাং, ডায়াবেটিসের কারণে হূদেরাগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তের চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তের চর্বির মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এ পরীক্ষাকে বলে ‘লিপিড প্রোফাইল’।
লক্ষ্য স্থির করতে হবে এলডিএলের মাত্রা
ডায়াবেটিস হলে রক্তে এলডিএলের মাত্রা বাড়তে থাকে। রক্তে এলডিএলের মাত্রা বেশি থাকলে তা রক্তনালির দেয়ালে জমা হয়। রক্তনালির ভেতরটা সরু হয়ে যায়। এর ভেতর দিয়ে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। হূৎপিণ্ডের রক্তনালি সরু হয়ে গেলে হূৎপিণ্ডের পেশি প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত পায়। এতে হূদেরাগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে হলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সুস্থতার জন্য রক্তে এলডিএলের মাত্রা কমানো প্রয়োজন। প্রতি ডেসিলিটার রক্তে বা প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে এলডিএলের মাত্রা ১০০ মিলিগ্রামের কম হওয়া উচিত। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ৭০ মিলিগ্রামের কম থাকলেই ভালো। রক্তে এলডিএলের মাত্রা কম রাখতে পারলে হূদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যায়।
এইচডিএলের মাত্রা
ডায়াবেটিস হলে রক্তে এইচডিএলের মাত্রা কমতে থাকে। এইচডিএলের কাজ রক্তনালির দেয়াল থেকে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দেওয়া। তাতে রক্তনালির ভেতর দিয়ে সহজেই রক্ত প্রবাহিত হতে পারবে। তাই রক্তে এইচডিএলের মাত্রা কমে গেলে তা বাড়াতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে এইচডিএলের মাত্রা ৪০ মিলিগ্রামের বেশি আর নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ মিলিগ্রামের বেশি থাকা প্রয়োজন। যত বেশি থাকে, তত বেশি ভালো। যদি ৬০ মিলিগ্রামের বেশি থাকে, তাহলে তা হূদেরাগ প্রতিরোধে কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা
ডায়াবেটিসে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বেড়ে যায়। এর মাত্রা বেড়ে গেলে এলডিএলের মতোই তা রক্তনালির দেয়ালে জমা হয়। ফলে রক্তনালির ভেতরটা সরু হয়ে যায়। রক্তনালির দেয়াল শক্ত হয়ে যায়। সরু রক্তনালির ভেতর দিয়ে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। হূদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুতরাং, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে হবে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রামের কম হওয়া উচিত। তাতে হূদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রক্তের লিপিডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় হচ্ছে তিনটি মূলমন্ত্র:
শৃঙ্খলা
সব সময় কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে আছে: নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত ও সময়মতো উপযুক্ত খাবার আর ওষুধের প্রয়োজন পড়লে নিয়মিত ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন গ্রহণ।
খাবারদাবার
শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। আঁশসমৃদ্ধ খাবারদাবারও বেশি খাওয়া উচিত। রিফাইন্ড শর্করা কম, অরিফাইন্ড শর্করা পরিমাণমতো খেতে হবে।
ওষুধ
ওষুধের প্রয়োজন পড়লে মুখে খাওয়ার ওষুধ খেতে হবে। আর ইনসুলিন ইনজেকশন দরকার হলে ইনসুলিন নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তের লিপিডের মাত্রা সঠিক রাখার চেষ্টার পাশাপাশি এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানো ও এইচডিএলের মাত্রা বাড়ানোর উপায় অবলম্বন করতে হবে। আর এসব করা যায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর মাধ্যমে:
খাবারে চর্বি গ্রহণে সতর্কতা
রান্নায় তুলনামূলক কম তেল-চর্বি ব্যবহার করা। কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খাওয়া। স্যাচুরেটেড তেল, ট্রান্সফ্যাট কম খাওয়া; আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি খাওয়া।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে দ্রুতলয়ে হাঁটা। বাড়িঘরের দৈনন্দিন কাজ নিজ হাতে করা। লিফটে নয়, হেঁটে সিঁড়িতে ওঠা। গন্তব্যে পৌঁছার একটু আগে রিকশা বা ট্যাক্সি থেকে নেমে বাকি পথ হেঁটে যাওয়া বা বাসা থেকে বের হয়েই রিকশা, ট্যাক্সিতে না উঠে একটু দূরে হেঁটে গিয়ে ওঠা—এসবের মাধ্যমেও বেশ ব্যায়াম হবে। ভালো কোলেস্টেরল বাড়বে, খারাপ কোলেস্টেরল কমবে।
শরীরের ওজন কমানো
ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক রাখা। এর ফলে শরীরের চর্বি কমবে, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকবে।
আঁশযুক্ত খাবার
যেমন-শাকসবজি, লাল আটা, লাল চালের ভাতজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় বেশি রাখা; খাদ্যের আঁশ রক্তের চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে খুবই কার্যকর।
ধূমপান পরিহার করা
ধূমপান না করলে তাও রক্তের চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে।
মো. শহীদুল্লাহ
যথাসম্ভব লিফট পরিহার করে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠুন, নিজের অজান্তেই হয়ে যাবে ব্যায়াম
অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৭, ২০১২

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ও দাঁতের যত্ন

teeth

কীভাবে ডায়াবেটিস দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে
দাঁত ও মাড়ির সমস্যা যে কারও হতে পারে। আপনার দাঁতের ওপর একটি চটচটে জীবাণু দ্বারা পূর্ণ আবরণ পড়তে পারে। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জীবাণু তৈরিতে সহায়তা করে। আপনি লাল, কালচে ও ফোলা মাড়ি দেখতে পাবেন, যা রক্ত ঝরাবে আপনি যখন ব্রাশ করবেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাঁত ও মাড়ির সমস্যা প্রায়ই হবে, যদি তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ দাঁত ও মাড়ির সমস্যা অধিকতর খারাপ করতে পারে। এমনকি আপনি আপনার দাঁত হারাতে পারেন। ধূমপান আপনার মাড়ির রোগটাকে আরও খারাপ করতে পারে।
যদি আপনার দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি হয় কীভাবে তা বুঝবেন?
ডায়াবেটিসের কারণে আপনার দাঁত ও মাড়ির ক্ষত হতে পারে, যদি আপনার এক বা অধিক এই ধরনের সমস্যা থাকে—
 লাল, কালচে ও ফোলা মাড়ি
 মাড়ি থেকে রক্ত ঝরা
 মাড়ি দাঁত থেকে সরে আসবে সে জন্য আপনার দাঁতকে লম্বা দেখাবে।
 দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস
 দাঁতের কামড়, যা অন্য রকম মনে হবে
 কৃত্রিম দাঁত যদি ভালোমতো না লাগে।
কীভাবে আপনি আপনার দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখবেন
 রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি
রাখতে হবে।
 দিনে অন্তত একবার হলেও ডেন্টাল ফ্লস (মাড়ি খিলালকরণ) ব্যবহার করতে হবে।
 নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার দাঁতের ওপর চটচটে (ডেন্টাল প্লাক) আঠালো আবরণ পড়তে বাধা দেয়।
 যদি আপনি কৃত্রিম দাঁত ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
 আপনার দাঁতের চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে হবে কীভাবে দাঁত ব্রাশ ও ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হয় এবং আরও জানতে হবে ব্যবহারের জন্য দাঁতের সঠিক ব্রাশ ও পেস্ট কোনটি।
 আপনার দাঁতের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন যদি আপনার লাল, কালচে অথবা মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে, মাড়ি যদি দাঁত থেকে সরে আসে, একটি কালশিটে দাঁত, যেটা সংক্রামিত হতে পারে অথবা আপনার কৃত্রিম দাঁত থেকে ব্যথা হতে থাকে।
 বছরে দুবার দাঁতের চিকিৎসক দিয়ে আপনার দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করাবেন।
 দাঁতের চিকিৎসককে অবশ্যই আপনার ডায়াবেটিস আছে কি না জানাতে হবে।
 যদি আপনি ধূমপান করেন, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জানতে হবে কীভাবে ধূমপান ছাড়া যায়।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষ ও মহিলা রোগীকে প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশও ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
মাহফুজুল হক খান
সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিস্ট্রি, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২১, ২০১২

কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসা

dental2

একটা বয়সে এসে নিঃসঙ্গতা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য সবাই এখন সচেষ্ট। আর তাই বিউটি পারলারে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও ভিড় জমায়। সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সুন্দর ঝকঝকে দাঁতের গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দর হাসির মাধ্যমে মানুষ ঈর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের মধ্যেই অনেকে নিজের হাসি লুকিয়ে রাখতে চাই, কারণ হিসেবে কাজ করে চারটি যুক্তিসংগত অবস্থা—বিবর্ণ দাঁত, এলোমেলো দাঁত, মুখে দুর্গন্ধ ও এক বা একাধিক দাঁতবিহীন মুখ। প্রত্যেক মানুষকে স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে, এসব অবাঞ্ছিত অবস্থার সুচিকিৎসা রয়েছে।
দাঁত বিবর্ণ হওয়ার কারণ দুটি, প্রথমটি বাহ্যিক; যেমন—নিয়মবহির্ভূত দাঁত পরিষ্কারের জন্য দাঁতের পৃষ্ঠে প্ল্যাক ও পাথর জমা, খাদ্যকণা, চা, কফি, ধূমপান, পান-সুপারি, ব্যবহূত পানিতে অধিক লৌহ ইত্যাদি আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ; যেমন—জন্মগত ত্রুটি, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কিছু রোগ, দাঁতে আঘাত প্রভৃতি।
কারণ যা-ই হোক, দাঁতকে উজ্জ্বল সাদা রাখার ইচ্ছা সবার। বাহ্যিক কারণে দাঁত বিবর্ণ হলে বিজ্ঞানসম্মত স্কেলিং ও পলিশিংয়ের মাধ্যমে তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ব্রিচিংয়ের। এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে দাঁতকে উজ্জ্বল করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও এই পদ্ধতিকে ত্বরান্বিত ও অধিক কার্যকর করতে লেজার বা বিশেষ ধরনের রশ্মি ব্যবহূত হচ্ছে।
লেজার টুথ হোয়াইটেনিং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই দাঁতকে সাদা ও উজ্জ্বল করে।
এলোমেলো, উঁচু-নিচু বা ফাঁকা দাঁত নিয়েও অনেকের মনঃকষ্টের শেষ নেই। বংশগত কারণে চোয়ালের হাড় ও দাঁতের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা, সঠিক সময়ে দুধদাঁত না পড়া, আঙুল চোষার মতো আপত্তিকর অভ্যাস, জন্মগত কারণে দাঁতের নিজস্ব সম্পর্কের অস্বাভাবিকতা, দাঁত ফেলে দিলে অন্যান্য দাঁতের অবস্থান পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে দাঁত এলোমেলো হতে পারে। শুরুতে অর্থোডন্টিক চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতকে সুন্দর ও সুসজ্জিত করা যায় সহজেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসায় যেকোনো বয়সেই অর্থোডন্টিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রথম এর কারণ খুঁজতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত মুখ পরিষ্কারের অভাবে দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে মুখে দুর্গন্ধ হয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধূমপান, ঘন লালা, শুষ্ক মুখ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। অনেক সময় সাইনাস বা ফুসফুস সংক্রমণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনির রোগ প্রভৃতি কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
এ অবস্থায় ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ ও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো মুখ পরিষ্কার রাখলে বিব্রতকর এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
দাঁত হারিয়ে ফোকলা মুখ নিয়েও মানুষের লজ্জার শেষ নেই। বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করেছেন, দাঁত হারালে শুধু সৌন্দর্যহানি হয় না; পাশাপাশি অপুষ্টি, উচ্চারণে অসুবিধা, খাদ্যের স্বাদ পরিবর্তন, এমনকি স্মৃতিশক্তি কমে যায় ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ে।
কৃত্রিম দাঁত সংযোজনের তিনটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির মধ্যে সর্বশেষ পদ্ধতিটি হচ্ছে ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি। সর্বাধিক আরামদায়ক এই পদ্ধতিতে ধাতব দণ্ড বা স্ক্রু হাড়ের মধ্যে প্রতিস্থাপন করে তার ওপর কৃত্রিম দাঁত সংযোজন করা হয়। এর ফলে মানুষ কৃত্রিম দাঁতের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে না।
দাঁত ভেঙে গেলে বা গর্ত হলে বন্ডিং কম্পোজিট ফিলিং দাঁতের সঙ্গে কৃত্রিম পদার্থের উপস্থিতি বুঝতে দেয় না। হুবহু দাঁতের রঙের সঙ্গে মিলে যায়।
মো. আসাফুজ্জোহা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০১২

শ্রুতিবান্ধব ফোন

cell-phone

স্বাস্থ্যের ওপর মুঠোফোনের প্রভাব শুভ না অশুভ, এই নিয়ে দেশে দেশে গবেষণার অন্ত নেই। ব্রেন টিউমার এবং ইউভিয়ার ক্যানসারের জন্য অধিকতর ঝুঁকি সৃষ্টি হয়—এমন একটি ধারণা থাকলেও শক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
মুঠোফোন কাজ করে নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন দিয়ে। আর ক্যানসার হয় আয়োনাইজিং রেডিয়েশন দিয়ে। রেডিয়েশন কথাটি শুনলেই ভয় পেয়ে যাই আমরা। তবু যতই থাক ভয়ভীতি, মুঠোফোন ছাড়া এখন কি আর কোনো কিছুই সম্ভব, সভ্যতা-সংস্কৃতি? প্রয়োজন শুধু সব প্রযুক্তির সতর্ক আর সুন্দর ব্যবহার। আসুন দেখি ফোনের কিছু সম্ভাবনার দিক।
ভিডিও টেলিফোন
যারা কানে কম শোনে তাদের পক্ষে টেলিফোনে কথা বলা বেশ কষ্টকর। কিন্তু যদি টেলিফোন কলটির সঙ্গে বক্তার ছবি দেখানো সম্ভব হয়, তাহলে এ কষ্টটা নিশ্চয় লাঘব হতে পারে।
সাইড টোন সচেতনতা
সাধারণ ফোনগুলোতে শ্রোতা মাউথপিস দিয়ে ঢোকা কিছু শব্দ ইয়ারপিসে আবার শুনতে পায়। যারা কম শোনে তাদের জন্য এই শব্দ আগে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চাৎপটের অবাঞ্ছিত শব্দ এতে করে সাইড টোন হিসেবে ঢুকে পড়ে। তা ছাড়া রয়েছে লাইন নয়েজ বলে একটা অসুবিধা। এগুলো কমবে যদি শ্রোতা শোনার সময় মাউথপিসটিকে চেপে ধরে অথবা যেখানে মিউট বাটন দেওয়া থাকে, সেখানে তা পিটে দেয়।
হিয়ারিং এইড ও মুঠোফোন
হিয়ারিং এইডের সঙ্গে অনেকে সাধারণ ফোন ব্যবহার করে থাকেন। এতে ভালো শোনাও যায়। এ ক্ষেত্রে ইয়ারপিসকে এইড থেকে দূরে রাখলে শুনতে আরও সুবিধা হয়। ৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত শ্রুতি বাড়ানো যায়, যদি একটি টেলিকয়েল দিয়ে ফোন এবং হিয়ারিং এইডের মধ্যে সংযোগ সাধন করা যায়। ফোন থেকে সরাসরি হিয়ারিং এইডে ইনপুট পাঠানো গেলে সেটি হতে পারে বেশ আকর্ষণীয়।
অ্যামপিমরফাইড হ্যান্ডসেট
এটি ব্যবহার করে ২০ ডিবির মতো বাড়তি শ্রুতি পাওয়া যায়। হ্যান্ডসেটগুলো পোর্টেবল বা ফিক্সড থাকতে পারে। এভাবে হিয়ারিং এইড ছাড়াই কাজে লাগতে পারে হ্যান্ডসেটগুলো।
এসএমএস
মুঠোফোনের শর্ট মেসেজ সার্ভিসটি বধির ও শ্রুতিকাতর ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার কাজ এগিয়ে চলেছে।
টেক্সট টেলিফোন
গভীরভাবে যারা বধির তাদের জন্য সহায়ক। এখানে আছে একটি কি-বোর্ড ও একটি পর্দা এবং এটি হচ্ছে একটি দ্রুতগামী ই-মেইল ব্যবস্থার মতো। একজন কমিউনিকেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট যদি রিলে স্টেশনে বসে মুখে বলা কথাগুলো টাইপ করে শ্রোতার কাছে পাঠিয়ে দেন, তাহলে এ ব্যবস্থা আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
ব্লু টুথ
কম পাল্লার সেট ব্যবহার করে টেলিফোন বা দূরবর্তী মাইক্রোফোনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এই প্রযুক্তি।
আলোর ব্যবহার
ঘরময় ফ্লুরেসেন্ট আলো ব্যবহার করে শ্রুতিসহায়ক একটি ব্যবস্থা সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে।
উপসংহার
সমাজে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা সরলরৈখিক নয়। প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরও জন-অংশগ্রহণ অনেক সময় ব্যাপকতা পায় না।
যেমন বলা যায়, টেলিভিশনে সাব-টাইটেল ব্যবহারের ব্যবস্থার কথা। নতুন উদ্ভাবনগুলোও অধিকতর গবেষণার পর গ্রাহকপ্রিয় হয়ে উঠবে কি না, তা বলে দেওয়া যায় না।
মিরাজ আহমেদ
মেডিকেল অফিসার, নাক-কান-গলা বিভাগ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
মডেল: সামিয়া
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০১২

চোখ বেঁচে থাকবে চোখের আলোয়

eye

দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল
তাঁর দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ভরা জীবন ছিল। জীবনভর সংগ্রাম ছিল। আর এমন একটা জিনিস ছিল, যা আমাদের অনেকেরই নেই, থাকে না—‘কমিটমেন্ট’। মাত্র ৪৬ বছর বয়সী এক স্বপ্নবান ডাক্তারের গল্পের মতো অপ্রত্যাশিত অকালপ্রয়াণ এবং মানুষের জন্য ‘কমিটমেন্ট’-এর সত্য কাহিনি শোনানোর জন্যই আমার অশ্রুসিক্ত কলম চলছে আজ। প্রিয় পাঠক, আসুন, সেই মানবদরদি ডাক্তারের অল্প কিছু কথা জানি।
দেলদুয়ারের গাঁয়ের ছেলে
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের হিংগানগর গ্রামের ছেলে শিশির। তিন ভাই পাঁচ বোনের দারিদ্র্য-ক্লিষ্ট সংসারে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পায়ে হেঁটে দূরের স্কুল আর সাইকেলে টাঙ্গাইলের কলেজ পেরিয়ে ১৯৮৫ সালে সুযোগ পান মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার। শুরু হয় বাবুল চন্দ্র দের ডাক্তার হওয়ার গল্প।
ময়মনসিংহের সংগ্রামী জীবন
পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না ছেলেকে হোস্টেলে রেখে মেডিকেলে পড়ানোর। ছেলে তো দমার পাত্র নন। টিউশনি করে, কোচিংয়ে পড়িয়ে নিজের খরচ নিজেই চালান আবার খরচ বাঁচিয়ে বাবা-মায়ের সংসারেও দেন। বাবা-ভাই কৃষি কাজ করেন, জমিতে সার লাগবে, বোনের বিয়ে, পুজোর কাপড়—সব কিছুরই জোগান দেন মেডিকেল ছাত্র।
সন্ধানীময় জীবন
নিজের পড়াশোনা, ছাত্রছাত্রী পড়ানো, রামকৃষ্ণ মিশনে যাওয়া দৈনন্দিন রুটিন। সচেতন ছিলেন, ছাত্ররাজনীতির পঙ্কিলতা ভালো লাগল না, তাই জড়ালেন মেডিকেল ও ডেন্টাল ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সন্ধানীর সঙ্গে। নিজে রক্ত দিয়েছেন ২৫ বারের বেশি (আমার জানা মতে)। ১৯৮৬ সাল থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের আন্দোলনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
মানবতাবাদী ডাক্তার
১৯৯২ সালে স্বপ্নপূরণ। ডাক্তার হলেন। হলেন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির ময়মনসিংহ জোনের সাধারণ সম্পাদক। কখনোই ভোলেননি শিকড়ের কথা। নিজের গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই ‘ডাক্তারবাবু’। টাঙ্গাইলের নিজের এলাকায় মানুষজন অসুখ-বিসুখে চলে আসতেন ময়মনসিংহে—তাঁদের দেখভাল, চিকিৎসা, ওষুধপত্র, কারও রক্ত লাগলে—সব ভরসা শিশিরবাবু। ‘মরণোত্তর চক্ষুদানে কোনো ধর্মেই বাধা নেই’—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিনার সংগঠক ছিলেন, মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন ছাত্রজীবনেই।
মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ
বাংলাদেশে মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব নিরাময়ে পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি। মানুষকে বোঝানো এবং মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করানো খুবই দুরূহ কাজ। কর্নিয়া সংগ্রহ করা আরও দুরূহ। মৃত্যুর ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। অঙ্গীকার করলেও সব সময় কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না আত্মীয়স্বজন সহযোগিতা না করলে। তাই হাসপাতালের বেওয়ারিশ মরদেহ থেকেই কর্নিয়া সংগৃহীত হয় বেশি। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর আত্মীয়স্বজনকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রণোদিত করে মৃত্যুর পর কর্নিয়া সংগ্রহ করার দুরূহতম মহৎ কাজটি করতে প্রথম সক্ষম হয়েছিলেন ডা. শিশির। আবার ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক আভা হোসেনের প্রথম কর্নিয়া সংযোজনের অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে সন্ধানী লটারির আয়োজন—সবকিছুতেই তাঁর অবদান ছিল। আমরা কি কেউ ভেবেছিলাম, মানুষের চোখ চেয়ে চেয়ে অসময়ে নিজের দুই চোখ তিনি দিয়ে যাবেন— ‘কমিটমেন্ট’ রক্ষা করার জন্য!
দুই নয়নের মণি
তাঁর দুই কন্যা জয়িতা (১২) আর অর্চিতা (৭), তাঁর দুই নয়নের মণি। নিজে সারা জীবন কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হয়েছেন, ছুটির দিনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গেছেন প্র্যাকটিস করতে—স্বপ্ন ছিল দুই কন্যাকে নিজের মতো ‘মানুষ’ করবেন—ওদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। ইচ্ছে ছিল নিজের গ্রামে একটি ছোট হাসপাতাল করে গ্রামের নারীদের চিকিৎসাসেবা দেবেন। মেয়েদের নিয়ে স্কুলের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার—ফিরলেন ২ জানুয়ারি ভোরে—বাসায় ঢুকে হঠাৎ বুকে ব্যথা, ঢলে পড়লেন। চিকিৎসার সুযোগও দিলেন না, যেন সমুদ্রস্নান সেরে পবিত্রযাত্রা করলেন পরপারে।
…স্বপ্ন দেখব বলে দুচোখ মেলেছি
মরদেহ ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল। স্ত্রী, কন্যাসহ নিকটাত্মীয়রা বসে আছেন পরিচালকের কক্ষে, আর তাঁকে নিয়ে আমরা চক্ষু অস্ত্রোপচার কক্ষে। সন্ধানীর আমরা কজন তাঁর কর্নিয়া দুটো সংগ্রহ করব। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির ‘আই ব্যাংক সমন্বয়কারী’ নিপুণভাবে কর্নিয়া সংগ্রহ করছেন—আমরা পাশে দাঁড়িয়ে। শিশির দা কি শেষবারের মতো তাকালেন? বললেন, স্বপ্ন দেখব বলে দুচোখ মেলেছি… আহ্ কী কষ্ট!
পরদিন ঢাকায় তাঁর কর্নিয়া দুটো প্রতিস্থাপিত হয়েছে—দুজন অপরিচিত মানুষের চোখে। এই দুজন মানুষ এখন এই পৃথিবীকে দেখবেন তাঁর দুই কর্নিয়া দিয়ে।
শুধু ধন্যবাদ নয়, বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁর মা, স্ত্রী, কন্যাদ্বয় এবং ভাইবোনদের প্রতি। তাঁর অঙ্গীকার পূরণে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য।
আসুন ডা. শিশিরের মতো আমরাও মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করি। আর তাঁর পরিবারের মতো সেই অঙ্গীকার পূরণে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসি।
আমাদেরও দায়িত্ব আছে…তাই স্বপ্ন দেখব বলে দুহাত পেতেছি
সারা জীবন কষ্ট করে যখন একটু সুখের মুখ দেখতে শুরু করলেন, বিধাতা তখনই তাঁকে নিয়ে গেলেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে তাঁর গৃহলক্ষ্মী স্ত্রী আবারও কষ্টযাত্রা শুরু করবেন? দেশ-বিদেশে কত হূদয়বান, সামর্থ্যবান মানুষ আছেন—আমরা বিশাল সন্ধানী পরিবার আছি—দুই কন্যার লেখাপড়া, ভরণপোষণের জন্য আমাদের, সমাজের কি কোনোই দায়িত্ব নেই? আসুন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই, দায়িত্ব পালন করি। তিনি কিন্তু দেখবেন দিব্যচোখে, তাঁর চোখের মণিদুটো বেঁচে থাকবে চোখের আলোয়।
(ডা. বাবুল চন্দ্র দে তহবিলে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করুন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি, ৮৬১৪০৪০ নম্বরে, ই-মেইল করুন iqbal5567@yahoo.com; অথবা snedsbd@gmail.com)
ডা. ইকবাল কবীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০৯, ২০১৩

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে…


bron
ব্রণ বা অ্যাকনি ত্বকের তেলগ্রন্থি বা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের একটি প্রদাহজনিত রোগ। ব্রণকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি রোগ হিসেবেই দেখা হয়। এর সুনির্দিষ্ট কারণ ও নিরাময়যোগ্য চিকিৎসাও আছে।
সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সে দেহে নানা হরমোনের ওঠানামার কারণে এ সময় ব্রণের প্রকোপ বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় এমনিতেই সেরে যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও যে ব্রণের ঝামেলায় ভোগেন না, তা নয়। ব্রণের আক্রমণের পেছনে বংশগত বা জেনেটিক কারণ যেমন দায়ী তেমনি হরমোনজনিত জটিলতা যেমন অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব, প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবহার, জীবাণুর আক্রমণ, মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদিরও হাত আছে।
ব্রণ হলে সাধারণত চুলকানি থাকে না। তবে ব্যথা হতে পারে। কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মেয়ে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামের একধরনের হরমোনজনিত জটিলতায় ভোগে। এদের ব্রণ বেশি হয়। এদের ওজন কমালে এবং চিকিৎসা করলে ব্রণ সেরে যায়। কারণভেদে চিকিৎসকেরা নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টি অ্যান্ড্রোজেন, স্পাইরোনোল্যাকটন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করেন ব্রণের চিকিৎসায়।
তবে গর্ভবতী নারী বা সন্তানধারণে চেষ্টা করছেন এমন নারীদের ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার। প্রথম তিন মাস কোনো ধরনের ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
ব্রণ হলে মুখের ত্বক খোঁটা উচিত নয়, এতে ত্বকে দাগ পড়ে যাবে। সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাবার বা ভাজা পোড়া এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোনো প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারের আগে সাবধান হওয়া উচিত। ব্রণের কারণে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তা না করে সঠিক কারণ চিহ্নিত করুন। কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলে তার চিকিৎসা নিন।
এম মনিরুজ্জামান খান, ত্বক বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩

বয়স্কদের হাঁটুব্যথা

hatu betha

কয়েক দিন থেকে হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব শফিক। বাড়ির সবার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত গেলেন চিকিৎসকের কাছে। জানা গেল, লিফট নেই বেশ কয়েক তলা উঁচু বাসায়। তাই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে তাঁর এ অবস্থা।
এমন ব্যথার কারণ
বয়স্কদের মধ্যে হাঁটুব্যথার প্রধান কারণ হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস, যা হাঁটুর অস্থিসন্ধির মধ্যকার তরুণাস্থির বয়সজনিত ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে। এ ছাড়া হতে পারে আগের কোনো আঘাতজনিত ব্যথা, অস্থিসন্ধির সংক্রমণজনিত ব্যথা অথবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
কী করবেন?
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল)-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এম হাবিবুর রহমান বলেন, ক্রমাগত হাঁটুর ব্যথায় ভুগতে থাকলে জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। খাওয়ার সময় বসতে হবে চেয়ারে, নামাজ পড়তে হবে চেয়ারে বসে। গোসলসহ দৈনন্দিন সব কাজই উঁচু জায়গায় বসে করার অভ্যাস করতে হবে, যেন হাঁটুতে বেশি চাপ না পড়ে। বাথরুমেও ব্যবহার করতে হবে হাইকমোড। রান্নাবান্না, তরকারি কাটার মতো কাজও করতে হবে টেবিল বা কোনো উঁচু জায়গায়। ঘর মুছতে ব্যবহার করতে হবে লম্বা হাতলওয়ালা ঘর মোছার যন্ত্র। এ ছাড়া হাঁটুর কিছু ব্যায়াম (যেমন কোয়াড্রিসেপস এক্সারসাইজ) নিয়মিত করতে হবে। হাঁটুতে ব্যবহার করা যেতে পারে বিশেষ ধরনের ক্যাপ অথবা হাঁটার জন্য লাগবে লাঠির সাহায্য। আর ওজনটাও রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে।
তবে এসবে ব্যথা না কমলে নিতে হবে ফিজিওথেরাপি। তাপচিকিৎসার মাধ্যমেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যান।
সিঁড়ি যদি ব্যবহার করতেই হয়
হাঁটুব্যথার রোগীদের সিঁড়ি ব্যবহার করতে হলে সিঁড়ির রেলিং ধরে ওঠানামা করতে হবে। প্রতিটি তলায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে হবে কিছুক্ষণ, এমনকি পারলে সিঁড়ির মাঝামাঝি স্থানেও বিশ্রাম নেওয়া উচিত। প্রতি পদক্ষেপে কখনোই একটির বেশি সিঁড়ি ভাঙা যাবে না। ডান হাঁটুতে ব্যথা থাকলে সিঁড়িগুলোতে প্রথমে বাঁ পা দিয়ে উঠতে হবে আর নামার সময় আগে ডান পা দিয়ে নামতে হবে। যাঁদের বাঁ হাঁটুতে ব্যথা, তাঁদের জন্য সঠিক পদ্ধতি হলো ঠিক এর উল্টোটা।
অস্ত্রোপচারও লাগতে পারে
এত কিছু মেনে চলার পরেও যদি কারও ব্যথা উপশম না হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আর্থ্রোস্কোপি অ্যান্ড রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু জাফর চৌধুরী বলেন, যেসব অস্টিওআর্থ্রাইটিসের রোগীর হাঁটুতে খুব বেশি সমস্যা দেখা দেয়, অর্থাৎ শুধু ফিজিওথেরাপিতে যাঁদের ব্যথা উপশম হয় না, তাঁদের জন্য রয়েছে হাঁটুর সম্পূর্ণ অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপন করার চিকিৎসা। এই অস্ত্রোপচারের সাত দিন পরেই রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। এরপর তিনি কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারবেন। মাস খানেক কিছু ব্যায়ামও করতে হবে তাঁকে। তবে এসব রোগী আর কখনোই সম্পূর্ণ হাঁটু ভাঁজ করতে পারবেন না।
প্রতিরোধের উপায়
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। আর হাঁটুব্যথা সহনীয় পর্যায়ে থাকতেই জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনুন। তাহলে ভবিষ্যতে হাঁটুব্যথা আপনার জন্য দুর্দশা বয়ে আনবে না।
রাফিয়া আলম

কানের শোঁ শোঁ শব্দ

sho sho shobdo

অনেক সময় কানে শোঁ শোঁ শব্দ হয়ে থাকে। যেকোনো বয়সেই এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শব্দ হঠাৎ করে আসে, আবার অনেক সময় চলেও যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী হয়ে যায়। যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান খবিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত কারণে এই সমস্যা হতে পারে। যাই হোক, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এমন বিরক্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কেন হয় এই শব্দ
কারণগুলোকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কানের সমস্যার কারণে ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণেও কানে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।কানের সমস্যাগুলো
l কানে ময়লা জমলে
l বহিঃকর্ণে কোনো বস্তু আটকে গেলে
l মধ্যঃকর্ণে কফ জমে গেলে
l কানের পর্দা ফেটে গেলে
l কানে প্রদাহের সৃষ্টি হলে
l মধ্যঃকর্ণের অস্থিগুলো নড়াচড়া না করলে
l অন্তঃকর্ণের চাপ বৃদ্ধি পেলে
l শ্রবণ-সংক্রান্ত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে কানের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে
অন্যান্য সাধারণ সমস্যা
l ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে
l শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে
l দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
l মানসিক অস্থিরতার কারণে হতে পারে
l কিছু কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণেও হতে পারে
লক্ষণ
l কানে কম শোনা
l মাথা ঘোরানো
l কান বন্ধ লাগা ভাব ইত্যাদি
প্রতিকার ও চিকিৎসা
l যেকোনো কিছু দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করা যাবে না
l প্রদাহ ও পর্দা ফেটে গেলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে
l অনেক সময় শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে
l স্নায়ু সমস্যায় শ্রবণযন্ত্র বা টিনিটাস মাসকার ব্যবহার করলে শোঁ শোঁ শব্দ ভালো হয়ে যায়
l কিছু কিছু ওষুধ প্রয়োগেও কানের শোঁ শোঁ শব্দ কমে যায়
l রিলাক্সেশন থেরাপি বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমেও শোঁ শোঁ শব্দ কমে।
শরিফুল ইসলাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৩, ২০১৩

নিয়ম মেনে খুশকিনাশক শ্যাম্পু

khuski

পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ খুশকির যন্ত্রণায় জর্জরিত। বাজারের বা বিজ্ঞাপনের খুশকিনাশক সব ধরনের শ্যাম্পু বা দাওয়াই ব্যবহার করেও ফল হয় না। বাইরে গেলে বিব্রত হতে হয়, বিশেষ করে অফিসে-মিটিংয়ে-পার্টিতে সাজপোশাকের বারোটা বাজিয়ে দেয় মাথায় ভাসতে থাকা সাদা সাদা খুশকি।
খুশকি বা ড্যানড্রাফ আসলে আমাদের মাথার ত্বকের মৃত কোষ। আমাদের দেহের সব জায়গার ত্বকে প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরোনো মৃত কোষ নির্দিষ্ট সময় পর ঝরে পড়ে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারও কারও এই নতুন কোষ তৈরি হওয়া এবং মৃত কোষ ঝরে পড়ার হারটা বেশি। এই মৃত কোষগুলো সাদা গুঁড়োর মতো চুলে লেগে থাকে। অনেক সময় এর কারণে মাথা চুলকায়, মাথার ত্বক লাল হয়ে যায়।
খুশকি যদিও একটি স্বাভাবিক ঘটনা বা প্রক্রিয়া, কিন্তু নানা কারণে এটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত শুষ্ক ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত—দুই ধরনের ত্বকেই খুশকি বেশি হয়। নিয়মিত শ্যাম্পু না করার কারণে মাথার ত্বকে ময়লা জমাও একটি কারণ। সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত হেয়ার জেল, তেল, সেপ্র ইত্যাদির ব্যবহার খুশকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যাঁরা খুব ঘামেন, তাঁদেরও এটি বেশি হয়। স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তাও খুশকি বাড়ায়।
খুশকি ঠেকাতে যা করবেন
—নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখলে এবং প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে তৈলাক্ততা অনেক কমে আসে ও কোষ মৃত্যুর হারও কমে যায়। খুশকি কমাতে দুশ্চিন্তা কমান, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, জিংক ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার এই প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। চুলে অতিরিক্ত স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদি ব্যবহার করা ভালো নয়।
—সাধারণ যত্নে কাজ না হলে খুশকিনাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ধরনের খুশকিনাশক শ্যাম্পু আছে, কোনটা আপনার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে, তা খুঁজে পেতে হযতো আপনার সময় লাগবে। জিংক পাইরিথিয়ন, টার-সমৃদ্ধ, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড, কিটোকোনাজল—এর যেকোনো একটি ব্যবহারে খুশকি কমবে। প্রথমে প্রতিদিন বা এক দিন পর পর এ ধরনের মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, নিয়ন্ত্রণে চলে এলে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে এলে আবার সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
ডা. এম মনিরুজ্জামান খান
চর্ম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।

হাড় মজবুত রাখার উপায়

har

হাড়ের মূল উপাদান আমিষ, কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম। প্রাকৃতিক নিয়মেই ৩০ বছরের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে, হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হতে থাকে। ৫০ থেকে ৬০ বছরের দিকে হাড় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সামান্য আঘাতেও বয়স্ক ব্যক্তির মেরুদণ্ড, কটি, পাঁজর ও কবজির হাড় ভেঙে যেতে পারে।
হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া ও ভঙ্গুরতার ঝুঁকি কাদের বেশি?
 ৪০ শতাংশ হাড়ের ঘনত্ব বংশানুক্রমিকভাবে নির্ধারিত হয়। তাই পরিবারে হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে ঝুঁকিটা বেশি।
 ২০ শতাংশ হাড়ের ঘনত্ব নির্ধারিত হয় জীবনযাত্রার মাধ্যমে। শৈশব থেকে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম, খনিজ ও আমিষসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ধুমপান ও মদ্যপান বর্জন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা এবং কর্মক্ষম থাকা হাড়ের সুস্থতার জন্য দরকারি।
 পুরুষের তুলনায় নারীদের হাড় ভাঙার প্রবণতা বেশি; বিশেষ করে যাঁরা শারীরিক গঠনে পাতলা ও খাটো।
 প্রায় ২০ শতাংশ নারী মেনোপোজের পর মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার শিকার হন। একবার হাড় ভাঙার পরবর্তী বছরে সাধারণত আরেকটি নতুন হাড় ভাঙে।
 থাইরয়েড ও পিটুইটারি গ্রন্থির নানা সমস্যা হাড়ের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে।
 দীর্ঘদিনের স্টেরয়েড ওষুধ সেবন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, খাদ্যনালির অস্ত্রোপচার বা রোগ, যকৃতের সমস্যা ইত্যাদি হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে
উপসর্গ
হাড় ভাঙার আগে সাধারণত কারও কারও পিঠ, কোমর, ঘাড় ও পেশিতে ব্যথা হয়। কারও বয়সের সঙ্গে মেরুদণ্ডের কশেরুকার উচ্চতা কমে যায়, রোগী সামনে ঝুঁকে থাকে এবং পেছনে কুঁজো হয়।
হাড় মজবুত রাখার উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম—যেমন হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা এবং সব সময় কর্মক্ষম থাকা উচিত। কৈশোরে যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রম করলে হাড়ের ঘনত্ব ও দৃঢ়তা বৃদ্ধির ফলে বার্ধক্যে হাড়ের ক্ষয় কম হয়।
কৈশোরে দৈনিক এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম, ৫০ বছর পর্যন্ত এক হাজার মিলিগ্রাম এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এক হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সেবন করা উচিত। ধুমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। হাড়ের পরিমাণ হ্রাস, হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা নির্ণয় করা যায় বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ওষুধ সেবন করুন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্র।
ডা. মো. শরীফ হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ৩০, ২০১৩

কোমরে ব্যথা মানেই কিডনি সমস্যা?

waist-pain

কোমরের পেছন দিকে হালকা চিনচিনে ব্যথা—এমন উপসর্গ নিয়ে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ছোটেন চিকিৎসকের কাছে। আমার কিডনি কি খারাপ হয়ে গেল? শুনেছি কিডনির সমস্যায় পেছনে ব্যথা হয়? কোমর ব্যথার বেশির ভাগ রোগী মনে করেন, তাঁদের কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, কিডনিতে পাথর বা খারাপ ধরনের সংক্রমণ না হলে ব্যথা করার কথা নয়। কোনো রকম ব্যথা-বেদনা ছাড়াও কিডনি খারাপ হতে পারে। কোমর ব্যথারও আছে নানা কারণ ও উৎস।
কিডনি রোগের উপসর্গ বা ব্যথা
* কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হওয়ার কথা। এই ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে, শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই আরাম মেলে না।
* কিডনির সমস্যায় ব্যথা মূল উপসর্গ নয়, এতে শরীরে পানি আসা, দুর্বলতা, অরুচি, বমির ভাব দেখা দেয়।
* সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে এই ব্যথার সঙ্গে।
* প্রস্রাব ঘোলাটে হয়, দুর্গন্ধ বা রক্ত থাকতে পারে।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কম-বেশি হয়। রক্তশূন্যতা থাকতে পারে। কিডনি খারাপ হওয়ার পেছনে দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ, ব্যথানাশক বড়ি খাওয়া ইত্যাদির ইতিহাস থাকবে।
কোমর ব্যথা মানে কী?
* বেশির ভাগ কোমর ব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত।
* এটি নির্দিষ্ট অংশ জুড়ে হয়।
* মেরুদণ্ডের নড়াচড়া যেমন ওঠাবসা, সামনে ঝোঁকা, হাঁটা বা দাঁড়ানো, অনেকক্ষণ ধরে কাজ করা বা শুয়ে থাকার সঙ্গে এই ব্যথা বাড়ে-কমে।
* সাধারণত জ্বর হয় না (তবে টিউমার, টিবি ইত্যাদি ছাড়া)। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, অরুচি, বমির ভাব ইত্যাদি আনুষঙ্গিক সমস্যা সাধারণত থাকে না।
* সাধারণত বিশ্রাম ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে ভালো হয়; বন্ধ করলে ব্যথা আবার ফিরে আসে।
ডা. শওকত আলম
 ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেজ অ্যান্ড ইউরোলজি।

শীতে ঠান্ডায় কানে তালা?

kan

শীতে ঠান্ডা লেগে হাঁচি ও সর্দিকাশির সঙ্গে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনাও ঘটে। কানে তালা মানে কান বন্ধ হয়ে থাকা, কিছু না শোনা। ব্যথাও হতে পারে। এ বিষয়টি আবার একেবারে হালকাও নয়। এ থেকে মধ্যকর্ণে অর্থাৎ কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
কাদের এ সমস্যা হতে পারে?
শিশুরা এ সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে। এ ছাড়া যাদের ঘনঘন ঊর্ধ্বশ্বাসনালির প্রদাহ বা সংক্রমণ হয়, কাশি হয়, প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ হয় ও ক্রনিক টনসিলের প্রদাহ আছে এমন ব্যক্তিদেরও ঝুঁকি বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রে এডিনয়েড নামক লসিকা কোষগুচ্ছের আকার অতিশয় বেড়ে গেলেও এ সমস্যা দেখা দেয়।
উপসর্গ কী?
মধ্যকর্ণে প্রদাহ হলে ঠান্ডা সর্দিকাশির সঙ্গে হঠাৎ করেই কানে বেশ ব্যথা হয় ও কান বন্ধ মনে হয়। কানে কম শোনা যায়। মাঝেমধ্যে কানের মধ্যে ফড়ফড় শব্দ করে।
রোগ বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্তমিশ্রিত পানি বা পুঁজ পড়তে পারে।
কী করা উচিত?
এ রকম সমস্যা দেখা দিলে প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ, প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়। বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। সমস্যা না মিটলে জটিলতার আগেই একজন নাক কান গলার চিকিৎ সকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো।
কেন লাগে তালা?
কানের সঙ্গে গলার সংযোগ রক্ষা করে অডিটরি টিউব। মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে এ টিউব। টিউবটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ দেখা দেয়। এতে মধ্যকর্ণে তরল পদার্থের উপস্থিতি, পুঁজ সৃষ্টি, পুঁজের কারণে পর্দা ফুটো হয়ে তা কান দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে ইত্যাদি।
ডা. সজল আশফাক
নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩

সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশের ৯ পরামর্শ

dat-brush

আমাদের দিন শুরু ও শেষ হয় দাঁত ব্রাশ করা দিয়ে। অথচ অনেকেই হয়তো জানেন না দাঁত ব্রাশ করার সঠিক নিয়মকানুন; বিশেষ করে আপনি নিজেই যদি না জেনে থাকেন, তবে বাড়ির শিশুটিকে শেখাতেও পারবেন না। আর সঠিক নিয়মে ব্রাশ না করলে লেগে থাকবে দাঁত ও মুখের নানা সমস্যা। তাই জেনে নিন কীভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।
১: প্রথম কথা হচ্ছে টুথব্রাশ বাছাই করা। ভালো মানের টুথব্রাশ ব্যবহার করুন, যার শলাকাগুলো বেশি শক্ত বা বেশি নরম নয়। ছোটদের জন্য ছোট আকারের ব্রাশ দরকার, যা ওদের মুখে সহজে আঁটে।
২: পরিমিত মাত্রায় পেস্ট নিয়ে সকালে নাশতার পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করুন। সম্ভব হলে ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। শিশুদের জন্য কম ঝাঁজাল টুথপেস্ট বেছে নিন।
৩: ব্রাশের শলাকাগুলো দাঁতের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনিভাবে ধরে ওপর পাটির দাঁত ওপর থেকে নিচে এবং নিচের পাটির দাঁত নিচ থেকে ওপরে ব্রাশ করুন।
৪: দাঁতের ভেতরে ও বাইরের অংশে সমান সময় নিয়ে ব্রাশ করুন। তাড়াহুড়া করবেন না। কমপক্ষে দুই মিনিট সময় নিয়ে ব্রাশ করুন।
৫: তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ব্রাশের শলাকাগুলো বাঁকা হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
৬ : দিনে কম পক্ষে দুবার ব্রাশ করার পাশাপাশি অন্য সময় চকলেট কিংবা মিষ্টিজাতীয় আঠালো খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁত ব্রাশ করুন।
যা করা উচিত নয়
৭: অতিরিক্ত দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই। বেশি জোরে ও দ্রুত ব্রাশ করা থেকেও বিরত থাকুন। ব্রাশের আঘাতে যেন মুখগহ্বরের ভেতের ঝিল্লির পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
৮:সামনে-পিছে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের গোড়া ক্ষয়ে যেতে পারে। ওপর-নিচে ব্রাশ করুন।
৯: টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন।
কীভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন?
১: ওপরের পাটি
মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে ব্রাশ পৌঁছে দিন।
২: নিচের পাটি
মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে ব্রাশ করুন।
৩: দাঁতের ওপরের অংশ
পেছনের দাঁতের ওপর-নিচ সবখানে ব্রাশ করুন।
৪: দাঁতের বাইরের অংশ
এক প্রান্ত থেকে শুরু করে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অথবা ওপর থেকে নিচের দিকে ব্রাশ করুন।
ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে এক থেকে দুই মিনিট সময় নিন।
অল্প পরিমাণে ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন এবং একটি ছোট ও নরম ব্রাশ বেছে নিন।
শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সঠিক নিয়মে ব্রাশ করা শেখানো অভিভাবকের দায়িত্ব। দাঁতের সুস্বাস্থ্যের জন্য শিশুদের মাছের কাঁটা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ডা. মোখলেছুর রহমান
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩

শীতে ত্বকের যত্ন

winter-skin-care

শীতকালে শুষ্ক শীতল হাওয়া ও বাতাসে বেড়ে যাওয়া ধুলাবালুর কারণে ত্বক হয়ে যায় খসখসে ও মলিন। এর ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা, যেমন ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি। তাই শীতকালে ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দরকার বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা।
ত্বকের শুষ্কতা
শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য ত্বক স্বাভাবিক আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে ফেলে। তাই শীতকালে গোসলে সাবান কম ব্যবহার করুন। আর করলেও ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে খসখসে ভাব কমে আসবে।
রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ফলে চুলকানিও হবে না এবং ত্বকও ফাটবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে রোজ গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা লিকুইড প্যারাফিন মাখতে পারেন।
চুলের যত্ন
শীতের সময় চুলে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যায়। খুশকিমুক্ত থাকতে নিয়মিত সপ্তাহে দুই দিন কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
হাতের তালু ও পায়ের তলার যত্ন
এ সময় ১০ ভাগ ইউরিয়া, ভেসলিন লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলা ফেটে যায়।
৫ ভাগ সেলিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা ভেসলিন নিয়মিত মাখতে পারেন।
মুখের যত্ন
ভালো ময়েশ্চা-রাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁরা ক্রিমের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।
শীত আসছে বলে ভাববেন না যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীতা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ঠোঁটের যত্ন
ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়।
কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভেসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।
যাঁদের পুরোনো চর্মরোগ যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা, ইকথায়সিস ইত্যাদি আছে, তাঁদের ত্বকের সমস্যা এই সময় বেড়ে যেতে পারে। তাই তাঁদের হতে হবে আরও সচেতন। প্রয়োজনে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক রাশেদ মো. খান
চর্ম ও যৌন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০১, ২০১৩

শিশুর দাঁতের ক্ষয়রোগ


teeth-baby
শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য তার মুখগহ্বরের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। জন্মের পর থেকে শিশুর এই যত্ন শুরু করা চাই। আর শিশুর বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের যত্ন পুরোদমে নিতে হবে।
শিশুর ডেন্টাল কেরিজ বা ক্ষয়রোগে দাঁতের অবস্থা, ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর উপস্থিতি ও শর্করাযুক্ত খাবার গ্রহণ—এ তিনের ভূমিকা প্রধান। স্টেপটোককসাই মিউটেনম নামের মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া দাঁতের এনামেল নষ্ট করে প্রধানত ক্ষয়রোগের সুযোগ সৃষ্টি করে। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় অন্য জীবাণু।
যখন মা-বাবা শিশুকে জুসভর্তি ফিডার বা বোতল মুখে পুরে দিয়ে ঘুমানোর কাজ সারেন—তা নিঃসন্দেহে দাঁত ক্ষয়ের পথ সুগম করে দেয়। দাঁতের ক্ষয়রোগ উৎপাদনে মুখের ভেতর বেশিক্ষণ ধরে পুরে রাখা শর্করাযুক্ত খাবার অনেকাংশে দায়ী। এ ক্ষেত্রে চুইংগাম বিভিন্ন কোমল পানীয়র শর্করার তুলনায় বেশি ক্ষতিকর।
সাধারণভাবে মোলার দাঁতের (ভেতরের দাঁত) প্রান্ত থেকে ক্ষয় বা পোকায় খাওয়া শুরু হয়। এই পর্বে তা থামানোর ব্যবস্থা না করা হলে দাঁতের আরও গভীরে ঢোকে। পালপাইটিস হয়, মাড়িতে ও দাঁতের চারপাশে পুঁজ, প্রদাহ হয়। আরও ছড়িয়ে তা পাশের দাঁত নষ্ট করে, চোয়ালের অস্থিও ছুঁতে পারে বা মুখ ও মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যায়।
নষ্ট হওয়া দাঁত চিহ্নিত করতে হবে আগে। ব্যথা-বেদনার জন্য ওষুধ দিতে হবে। সংক্রমণ কতটুকু ছড়িয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে খাওয়ানোর
কিংবা ইনজেকশনের সাহায্যে অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া যেতে পারে।
প্রতিরোধটাই আসল। শিশুর প্রতি রাতে ও সকালে দুবার ব্রাশ করা, নিয়মিত মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য-পরিচর্যা মানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও জরুরি শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাসে বোতল ফিডার ব্যবহার না করা।
ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
 শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩